ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন রকমের শীতের পিঠাপুলির সহজ পদ্ধতি

ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন রকমের শীতের পিঠাপুলির সহজ পদ্ধতিগুলো জানেন কি? ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন রকমের শীতের পিঠাপুলির সহজ পদ্ধতির মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই পিঠা তৈরি করতে পারবেন। আপনাদের জন্যে ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন রকমের শীতের পিঠাপুলির সহজ পদ্ধতি নিয়ে আজকের আলোচনা।
ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন রকমের শীতের পিঠাপুলির সহজ পদ্ধতি
বাঙালির ঐতিহ্যে শীতের পিঠা খাওয়ার রীতি চলে আসছে আদিকাল থেকেই। বাঙালির গ্রামীণ পরিবারগুলো শীতের সময় এখনও খেজুরের রস দিয়ে বিভিন্ন রকমের পিঠা তৈরি করে থাকে। শীতকালের বিভিন্ন রকমের ঐতিহ্যবাহী পিঠার মধ্যে মালপোয়া, মালাই পিঠা, ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, পাটিসাপটা, দুধ পুলি, ক্ষীর পুলি অনেক বেশি প্রচলিত।

পেইজ সূচিপত্র

ভূমিকা

ঐতিহ্যবাহী পিঠা শীতের সময় একটু বেশি খাওয়া হয় বলে খুবই জনপ্রিয় হয়ে থাকে। শীতের পিঠার রেওয়াজ অনেক পূর্বকাল থেকেই রয়েছে। শীতের সময় শুধু বাড়িতেই নয় আশেপাশে বাজারের বিভিন্ন ধরনের দোকানগুলোতেও পিঠা বিক্রি হতে দেখা যায়। এরই মধ্যে সবচাইতে বেশি ভাপা পিঠা এবং চিতই পিঠা বানাতে দেখা যায়।


লোকেরা সেই সকল দোকানকে ঘিরে পিঠা খাওয়ার জন্যে ভিড় করে থাকে। পৌষের প্রচন্ড শীতে এই পিঠার আমেজ খুব বেশি জমে উঠে। ফুটপাত থেকে শুরু করে রাস্তার মোড় কোন জায়গাই যেন বাদ যায় না। ঐতিহ্যবাহী ভাপা পিঠা বানানোর পর সেটি মাংসের ঝোল অথবা সুস্বাদু খেজুরের রস দিয়েও খাওয়া হয়।

খেজুর পিঠার ঐতিহ্যবাহী স্বাদ

বাঙালির ঐতিহ্যবাহী খেজুর পিঠার নাম কি কখনো শুনেছেন? খেজুর পিঠা খুবই সুস্বাদু একটি পিঠা যা একবার খেলে মুখে স্বাদ লেগে থাকে। এই পিঠা শুধু তৈরি করলেই হবে না এর সঠিক স্বাদ পাওয়ার জন্য আপনাকে ঠিকমতো পিঠা তৈরি করতে হবে। ঐতিহ্যবাহী এই পিঠার স্বাদ নিতে চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

  • খেজুর পিঠা তৈরি করতে আপনাকে কিছু উপকরণ সংগ্রহ করতে হবে।
  • যার মধ্যে রয়েছে ময়দা, সুজি, স্বাদমত লবণ, ডিম, ঘি, দুধ, তেল, বেকিং পাউডার এবং ডুবো তেলে ভাজতে পরিমাণ মতো তেল।
  • পরিমাণ মতো সকল উপকরণ নিয়ে এক ধরনের খামির তৈরি করে নিতে হবে।
  • খামির কিছুটা শুকিয়ে নিয়ে এর সাথে দুধ মিক্স করতে হবে।
  • আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে খামির যেন খুব বেশি শুকনা বা নরম না হয়ে যায়।
  • খামিরকে আপনি ছোট ছোট বল আকারে তৈরি করে নেবেন।
  • এরপর ছাকনির উপর সবগুলো তৈরি করা বলকে ডিমের মতো আকারে ছড়িয়ে দিতে হবে।
  • এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে না যাওয়া পর্যন্ত বলগুলো ভাঁজ করতে হবে।
  • পিঠাগুলো তৈরি করার পর আপনাকে গরম তেলে ভেজে নিতে হবে।
  • পিঠা ভাজার পর বাদামী রঙ ধারণ করলে টিস্যু পেপার এর উপর তুলে রাখতে পারেন।
  • ভিতরে যাতে কাঁচা না থাকে সেই জন্যে ধীরে ধীরে আপনাকে ভাজার চেষ্টা করতে হবে।

সুস্বাদু শীতের পিঠা তৈরির বিভিন্ন প্রক্রিয়া

সুস্বাদু করে শীতের পিঠা তৈরি করা বাঙালির একটি ঐতিহ্যবাহী আমেজ। যখনই শীত আসা শুরু হয় তখন থেকেই বিভিন্ন রকমের পিঠা পুলির উৎসব শুরু হয়ে যেতে দেখা যায়। এই সময়ে বিভিন্ন ধরনের পিঠাপুলির সাথে ক্ষীর পায়েস অথবা বিভিন্ন রকমের পিঠা তৈরির ধুমধাম পড়ে যায়।

অনেক রকমের শীতকালীন পিঠা রয়েছে যার মধ্যে ভাপা পিঠা এবং চিতই পিঠার প্রচলন বেশি দেখা যায়। কিন্তু এর পাশাপাশি রয়েছে পাটিসাপটা, ফুল পিঠা, জামদানি পিঠা, ঝাল পিঠা, মালাই পিঠা, চাঁদপাকন পিঠা, ছাঁচ পিঠা, জামাই পিঠা এবং দুধ পিঠার পাশাপাশি আরো অন্যান্য অনেক বাহারি রকমের পিঠা তৈরির প্রচলন বিদ্যমান।


যখনই শীত আসে তখনই সেই সকল সুস্বাদু বাহারি রকমের পিঠার আয়োজন শুরু হয়ে যায়। সেই সকল বাহারি রকমের পিঠার স্বাদ নিতে বিভিন্ন প্রক্রিয়াও আপনাকে জানতে হবে। যেমন চিতই পিঠা অনেকেই ভর্তা অথবা মাংসের সাথে খেয়ে থাকে।

ঐতিহ্যবাহী দুধ চিতই কিভাবে তৈরি করবেন

দুধ চিতই সকলের কাছেই প্রিয়। খুব কম লোকই খুঁজে পাওয়া যাবে যিনি দুধ চিতই পছন্দ করেন না। চিতই পিঠা তৈরি করতে পারলে দুধ চিতই তৈরি করা খুব বেশি কঠিন কিছু নয়। ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন রকমের শীতের পিঠাপুলির সহজ পদ্ধতি এর মধ্যে দুধ চিতই তৈরির প্রস্তুত প্রণালী নিম্নরূপে দেখুন।

  • প্রথমে আপনাকে চালের গুঁড়া পরিমাণ মতো দুই কাপের মতো নিয়ে নিতে হবে।
  • এর সাথে আখের গুড়, চিনি, ময়দা, দুধ এবং লবণ উপকরণ হিসেবে নিতে হবে।
  • খুব ভালোভাবে চিনি, দুধ এবং গুড় রান্না করে ঘন করে নিতে হবে।
  • চালের গুড়ার সাথে আপনাকে পরিমাণমতো পানি মিক্স করে নিয়ে পাতলা ডো করতে হবে।
  • যখনই চিতই পিঠার ডো তৈরি হয়ে যাবে তারপর পিঠা তৈরি করতে হবে।
  • পিঠা তৈরি হয়ে যাওয়ার পর এটিকে পরিমাণ মতো দুধের মধ্যে ভিজিয়ে রান্না করতে হবে।
  • যখনই ঠান্ডা হয়ে আসবে তখন দেখতে পাবেন নরম তুলতুলে দুধ চিতই তৈরি হয়েছে।
  • এরপর খাবারের জন্য এই দুধ চিতই পরিবেশন করতে পারেন।

মুগ ডাল দিয়ে পিঠা তৈরির সহজ উপায়

মুগ ডাল ব্যবহার করে পিঠা তৈরি করা খুবই সহজ। এই পিঠা তৈরির জন্য আপনাকে প্রথমে মুগ ডাল হালকা করে ভেজে নিতে হবে। ভেজে নেওয়ার পর এটাকে সিদ্ধ করে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এর মধ্যে এক কাপ পরিমাণ মুগডাল নিয়ে আতপ চালের আটা এর সাথে ঘি, চিনি এবং পরিমাণমতো পানি এর সাথে তেল মিক্স করে মুগ ডাল এর পিঠা তৈরি করতে হবে।

যখনই আপনি পরিমাণ মতো চালের আটা নিয়ে নিবেন, এর সাথে আপনাকে হালকা লবণ দিয়ে সাথে ঘি মিক্স করে সিদ্ধ করতে হবে। যখনই মুগ ডালের সাথে মিক্স করে নেবেন, তখন একটি কাই তৈরি করতে হবে। এরপর চিনি, ঘি এবং পানি দিয়ে একটি সিরা বানিয়ে নিবেন।

আপনি যেই কাই তৈরি করেছিলেন সেটি রুটির মত করে বেলে নিতে হবে। এরপর আপনার যেইভাবে ভালো লাগবে, সেইভাবে কেটে নিয়ে গরম তেলে হালকা আঁচে ভেজে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

নামকরা বিবিখানা পিঠা তৈরির প্রণালি

বিবিখানা পিঠা খেতে যেমন সুস্বাদু ঠিক তেমনি এটি তৈরি করাও খুবই মজার। এই পিঠা ঐতিহ্যবাহী হওয়ায় অনেকেই শখের বসেও খেয়ে থাকে। নামকরা এই ঐতিহ্যবাহী বিখ্যাত বিবিখানা পিঠা তৈরীর জন্য বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে যা আসুন জেনে নিই।

  • বিবিখানা পিঠা তৈরি করতে চালের গুঁড়ার সাথে নারকেল নিতে পারেন।
  • কুড়ানো নারকেলের সাথে আপনি প্রয়োজনমতো চিনি নিয়ে নিবেন।
  • এর সাথে এলাচের গুঁড়া, পানি, কিসমিস, গুঁড়া দুধ নিয়ে নিতে পারেন।
  • একটি পাত্রে হালকা আঁচে আপনি চালের গুড়া ভেজে নিতে পারেন।
  • এর সাথে পেস্তা বাদাম, ঘি এবং কিসমিস ভালোভাবে মিক্স করে নিয়ে নিন।
  • মিক্স করা হয়ে গেলে বেকিং পাত্রে ঘি নিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করুন।
  • যেই মিশ্রণটি তৈরি করেছেন সেটি ওভেনের ভিতর দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন।
  • কিছু সময় রাখার পর ছুরি দিয়ে একটু পর চেক করে নেবেন।
  • যখনই পিঠা তৈরি হয়ে যাবে তখন নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী কেটে নিয়ে পেস্তাবাদাম এবং কিসমিস ছড়িয়ে দিতে পারেন।
  • পিঠা তৈরি হয়ে যাওয়ার পর খাবারের জন্য পরিবেশনের প্রস্তুতি নিতে পারেন।

রসাপুলি তৈরির সঠিক নিয়ম

রসাপুলি তৈরি করার জন্য আপনাকে সবার প্রথমে একটি হাড়িতে চালের গুঁড়া এবং পানি মিক্স করে হালকা আঁচে বসিয়ে রাখতে হবে। একটু পর ঠান্ডা হয়ে আসলে ঢাকনা উঠিয়ে ভালো করে মুছে নিতে হবে। ভেজা কোন সুতি কাপড় দিয়ে আপনাকে সেটি ঢেকে রাখতে হবে।

যদি আপনি পুর তৈরি করতে চান এর জন্য আপনাকে ঘি এবং চালের সুজি নিয়ে হালকা ভেজে নিতে হবে। এর সাথে নারকেল এবং খেজুরের গুড় মিক্স করে ভালোভাবে নেড়ে দিতে হবে। দুধ জ্বাল হয়ে আসলে এর মধ্যে এলাচি, চিনি, তেজপাতা এইগুলো দিয়ে দিতে হবে। খেজুরের গুড় দিয়ে ভালোভাবে মিক্স করে নিতে হবে।

যেইখানে তৈরি করেছিলেন এর ভিতরে নারকেলের পুর দিয়ে সেখান থেকে পুলি পিঠা তৈরি করে নিতে হবে। যেই খামিরের অংশটুকু রেখে দিয়েছিলেন, সেটি দিয়ে আপনি হাতে সেমাই পিঠাও বানিয়ে ফেলতে পারবেন। যখনই আপনার পিঠা বানানো তৈরি হয়ে যাবে।

দুধ চুলায় দিয়ে পুলি এবং সেমাই পিঠা দিয়ে দিবেন। এই অবস্থায় এটিকে কিছু সময় রান্না করে নিতে হবে। যখনই নামিয়ে ফেলবেন এর পূর্বে কুড়ানো নারকেল এর উপরে ছড়িয়ে দিবেন। যখন ঠান্ডা হবে তখন খাবারের জন্য পরিবেশন করতে পারেন। 

পরিশেষে

উপরে উল্লেখিত ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন রকমের শীতের পিঠাপুলির সহজ পদ্ধতির যেই বিস্তারিত রয়েছে তা পড়ার পরে নিশ্চয়ই শীতের পিঠা তৈরীর বিষয়ে কিছুটা হলেও ধারণা নিতে পেরেছেন। এখন নিশ্চয়ই আপনার জন্যে শীতের পিঠা তৈরি খুব বেশি কঠিন মনে হবে না। কনকনে শীতের সময়ে বিভিন্ন রকমের পিঠা তৈরি করে খাওয়ার মজাই আলাদা।


যা আপনি চাইলে বাড়িতে বসেই খুব আরাম করে তৈরি করে খেতে পারেন। বিস্তারিত পরে ভালো লাগলে আশেপাশে সকলের মাঝে ঐতিহ্যবাহী পিঠা সম্পর্কিত পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন। আপনার মূল্যবান মতামত জানাতে পোস্টের নিচে মন্তব্য করুন এবং অজানা আরো কিছু বিষয়ে জানতে ওয়েবসাইট ভিজিট করে আসতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url