গরম গরম ভাপা পিঠা, শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে ঠান্ডায়
গরম গরম ভাপা পিঠা, শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে ঠান্ডায় খাওয়ার মজাটাই আলাদা। গরম গরম ভাপা পিঠা, শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে ঠান্ডায় তৈরি করতে বিস্তারিত পড়তে পারেন। গরম গরম ভাপা পিঠা, শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে ঠান্ডায় তৈরির প্রক্রিয়া খুবই অসাধারণ যা খেতে খুবই লোভনীয়।
পিঠার রাজা ভাপা পিঠা কেমন সুস্বাদু তা না খেলে বুঝবেন না। বিভিন্ন রকম প্রক্রিয়ায় এই ভাপা পিঠা অনেকে তৈরি করে থাকে। দেখা যায় যে মিষ্টি ভিতর দিয়ে না খেতে চাইলেও মাংস বা সবজির পুর দিয়েও ভাপা পিঠা তৈরি করে থাকে। শীতের সময় জাদুকরী এই সুস্বাদু ভাপা পিঠা অনেক বেশি পাওয়া যায়।
পেইজ সূচিপত্র
ভূমিকা
শীতের সকালে গরম ভাপা পিঠার সমাহারে আপনার মন জুড়িয়ে যেতে পারে। গরম গরম ধোঁয়া এর সাথে ভাপা পিঠা খাওয়ার তৃপ্তি যেন মুখে লেগে থাকে। গ্রামীণ জনজীবনে কৃষকদের ঘরে ঘরে শীত চলে আসলেই পিঠা বানানোর ধুমধাম শুরু হয়ে যায়। তবে এখনকার সময়ে শহরগুলোতেও অনেক বেশি পরিমাণে ভাপা পিঠার উৎসব হয়।
আরো পড়ুনঃ হরেক রকমের সুস্বাদু কিছু শীতের পিঠা
শহরের আনাচে কানাচে বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট দোকানে অস্থায়ী চুলো দিয়ে অনেককেই পিঠা তৈরি করতে দেখা যায়। হরেক রকম করে ভাপা পিঠা তৈরি খুব কম লোকই জেনে থাকতে পারে। কিন্তু যদি এই ভাপা পিঠা কেউ হরেক রকম করে তৈরি করতে পারে, তাহলে তার দোকানে ভিড় লেগে থাকার সম্ভাবনা খুব বেশি।
শীতের সকালে গরম গরম ভাপা পিঠা
শীতের সকালে গরম গরম ভাপা পিঠা সকলেরই পছন্দনীয়। এই ভাপা পিঠা শীতের সকালে অনেকে হরেক পদের ভর্তা দিয়ে খেতে পছন্দ করে। অথবা মাংসের ঝোল দিয়ে খেতে চায়। ভাপা পিঠার ভিতরে পুর হিসেবে খেজুরের গুড় ব্যবহার করা হয় যা খেতে খুবই সুস্বাদু লাগে। গরম গরম এই ভাপা পিঠা তৈরির একটি প্রক্রিয়া রয়েছে যা নিম্নরূপে আলোচনা করা হয়েছে।
- প্রথমে আপনাকে এর জন্যে চালের গুঁড়ো ছেঁকে নিয়ে নিতে হবে।
- পুর মিষ্টি খেতে চাইলে সাথে নিতে হবে এবং খেজুরের গুড়, কুড়ানো নারকেল নিবেন।
- চুলার উপরে পানি ভর্তি করে পাতিল দিতে হবে।
- এর উপরে কয়েকটি ছিদ্র বিশিষ্ট ঢাকনা পাতিলের মুখে রাখতে হবে।
- এরপর যদি পিঠা তৈরি করতে চান তাহলে চালের গুঁড়োকে একটি বাটিতে ভর্তি করে নিতে হবে। ভালোভাবে গুঁড়ো নিয়ে বাটিটি একটি পাতলা কাপড় দিয়ে খুব ভালোভাবে পেঁচিয়ে নিতে হবে।
- প্যাচানো হয়ে গেলে বাটি উঠিয়ে দিয়ে কাপড় ভালোভাবে ভাঁজ করে ভাপা পিঠাটি সেই পাত্রের উপরে দিয়ে দিতে হবে।
- তাতে করে কিছু সময় যাওয়ার পর ভাপা পিঠাটি হয়ে আসবে।
- এটি তৈরি হয়ে গেলে ভাপা পিঠা পরিবেশনের জন্য নিতে পারেন।
ভাপা পিঠার রেসিপি কিভাবে মজার হবে
ভাপা পিঠার রেসিপি তৈরি করতে আপনি যেভাবেই চান না কেন, খুবই মজাদার এবং সুস্বাদু এই পিঠা যেকোন ভাবেই তৈরি করা যায়। তবে এর জন্যে আপনাকে কিছু উপকরণ খুব ভালোভাবে সংগ্রহ করে নিতে হবে। যদি ভাপা পিঠা তৈরি করতে চান, তাহলে এর জন্যে প্রয়োজন প্রায় ছয় কাপের মতো চালের গুঁড়ো।
কোড়ানো নারকেল প্রায় দুই থেকে তিনটা নিতে পারেন যদি একটু মজাদার সুস্বাদু করে খেতে চান। সাথে আপনাকে নিতে হবে খেজুরের গুড়। লবণ এবং পানি পরিমাণমতো নিয়ে পিঠা বানানোর প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। ভাপা পিঠার রেসিপি তৈরি করা খুবই সহজ। এর জন্য আপনি প্রথমে চালের গুড়ার সাথে লবণ ও পানি ভালোভাবে মিশিয়ে নিবেন।
আরো পড়ুনঃ ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন শীতের পিঠার সহজ পদ্ধতি
যখনই ঝুরঝুরে হয়ে আসবে তখনই একটি চালুনি দিয়ে খুব ভালোভাবে চালের গুঁড়োগুলোকে চেলে নিবেন। কুড়ানো নারকেল এবং খেজুরের গুড় ভালোভাবে ছোট ছোট করে কুচি কুচি করে নিতে হবে। পিঠার পাতিলের নিচের অংশে অর্ধেকেরও বেশি পানি রাখতে হবে। এর উপরে পিঠা বানানোর জন্য বাটিতে চালের গুঁড়ো, নারকেল এবং গুড় দিবেন।
এর উপরে আবার চালের গুঁড়ো দিয়ে খুব ভালোভাবে একটি কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে দিতে হবে সেই বাটি সরিয়ে ফেলে এর উপরে ঢাকনা দিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। যখনই অল্প কিছু সময়ের মধ্যে ভাপা পিঠা হয়ে যাবে, তখন আপনি খুব সহজেই এটিকে নামিয়ে ফেলতে পারবেন। এই প্রক্রিয়ায় মজাদার ও সুস্বাদু ভাপা পিঠা তৈরি করা যায়।
গরম ভাপা চিতই ফুঁ দিয়ে কেন খাবেন
গরম ভাপা চিতই কার খেতে মন না চায়। হয়তো আপনাদের কেউ কেউ গরম ভাপা পিঠা অনেক বেশি পছন্দ করেন। সেইক্ষেত্রে মনে করুন আপনি একটি গরম ভাপা পিঠা খেতে যাবেন, সেই মুহূর্তে আপনি এই ভাপা চিতই খাওয়ার জন্য একটি টিপস অনুসরণ করতে পারেন।
- প্রথমে আপনাকে গরম ভাপা চিতই পিঠা চুলা থেকে নামিয়ে নিতে হবে।
- চুলা থেকে নামানোর পর একটি প্লেট বা বাটিতে নিতে হবে।
- যদি কেউ এইরকম হয় যে আপনার হাতে একটি পিঠা ধরিয়ে দিতে চাচ্ছে।
- এইক্ষেত্রে আপনি গরম ভাপা চিতই খাওয়ার ক্ষেত্রে কাটা চামচ ব্যবহার করতে পারেন।
- কাটা চামচ দিয়ে কেটে ফুঁ দিয়ে খেতে পারেন।
- এই অবস্থায় আপনি হয়তো এক টুকরো মুখের ভিতর দেওয়ার পর কিছু সময় হা করে ফুঁ দিয়ে গরম ভাব কমানোর চেষ্টা করছেন।
- কিছুটা সময় নিয়ে খাওয়ার পর দেখতে পাবেন পিঠা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে।
- এখন অনেক মজা করে সুস্বাদু ভাপা চিতই ঠান্ডা করে খেতে পারেন।
মাটির চুলায় গরম গরম ভাপা পিঠা
মাটির চুলায় অনেকেই গরম গরম ভাপা পিঠা, শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে ঠান্ডায় বানিয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় স্বল্প জায়গা নিয়ে অস্থায়ী কিছু দোকান এর মধ্যে ভাপা পিঠা তৈরি করছে। এই ধরনের অস্থায়ী দোকানগুলোতে মূলত প্রায় সময়ে মাটির চুলায় ভাপা পিঠা বানাতে দেখা যায়। তবে গ্রাম অঞ্চলগুলোতে ভাপা পিঠা মাটির চুলোতেই তৈরি করা হয়।
এর জন্যে প্রথমে আপনাকে একটি মাটির চুলা সংগ্রহ করতে হবে। মাটির চুলার উপরে পিঠা বানানোর জন্যে চালের গুঁড়ো প্রস্তুত রাখতে হবে। যখন চালের গুঁড়ো সংগ্রহ হয়ে যাবে, তখন এর সাথে খেজুরের গুড়, নারকেল রাখতে হবে। মাটির চুলা জ্বালিয়ে চুলার উপরে আপনাকে খুব ভালোভাবেই পানি ভরে একটি পাতিল বসিয়ে দিতে হবে।
এরপর যেই ধরনের ঢাকনায় ছিদ্র রয়েছে সেই ধরনের ছিদ্রবিশিষ্ট ঢাকনা পাতিলের উপরে বসিয়ে দিতে হবে। বসানো হয়ে গেলে আপনাকে চালের গুঁড়ো ছোট বাটি দিয়ে ভালোভাবে চালের গুঁড়ো ভর্তি করে রাখতে হবে। চালের গুঁড়ো ভর্তি হয়ে যাওয়ার পর কাপড়ে দেওয়ার পূর্বে এর মধ্যে নারকেল এবং গুড় দিয়ে দিতে হবে।
এরপর একটি কাপড় দিয়ে ভালো করে পেঁচিয়ে উপুড় করে ঢেলে দিতে হবে। যখনই আপনি বসিয়ে দেবেন এর কিছু সময় পর ভাপা পিঠা হওয়ার জন্য আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। অনেকেই দেখা যায় এই পিঠারপুর হিসেবে সবজি অথবা ঝাল যেকোন কিছু ব্যবহার করতে পারে। তবে মাটির চুলায় ভাপা পিঠা বানানোর স্বাদ একটু বেশি হয়।
ভাপা পুলি পিঠা কিভাবে তৈরি করবেন
ভাপা পুলি পিঠা তৈরি করার সিস্টেম না জানলে আপনার কাছে এই পিঠা তৈরি করা কঠিন লাগতে পারে। কিভাবে তৈরি করলে আপনি খুব সহজেই এই পিঠা খেতে পারবেন তার একটি নমুনা চলুন জেনে নিই।
- যদি আপনি নারিকেল দিয়ে ভাপা পিঠা তৈরি করতে চান, তাহলে এর জন্যে কিছু উপকরণ নিতে হবে।
- প্রথমত আতপ চালের গুঁড়ো, ময়দা, পানি, নারকেল, খেজুরের গুড়, সাদা তিল ভেজে গুঁড়ো করে সাথে নিতে পারেন।
- এই অবস্থায় নারকেল এবং খেজুরের গুড় একসাথে রান্না করে এক ধরনের পুর তৈরি করে নিতে হবে। আপনি চাইলে এর সাথে তিলও ব্যবহার করতে পারেন।
- তবে এর জন্যে এটিকে পুরো ঠান্ডা হওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
- এরপর আপনাকে পরিমাণ মতো পানি এবং লবণ মিক্স করে দিয়ে দিতে হবে।
- যখনই এটি ফুটে উঠবে তখন ঘি মিক্স করে এর সাথে চালের গুঁড়ো এবং ময়দা দিয়ে দিতে পারেন।
- অল্প আঁচে সিদ্ধ করে মথে নিতে হবে।
- যখন এটি কাই করে নিবেন তখন লুচির মত বেলতে হবে।
- এরপর এর মধ্যে পুর ভরে দিয়ে ভালোভাবে চেপে সুন্দর নকশা করে রাখতে পারেন।
- হাড়ির পানি যখন ভালোভাবে বগলানো দিয়ে উঠবে তখন কোন একটি চালনি দিয়ে বসিয়ে দিতে পারেন।
- চালনির উপরে এই ভাপা পিঠা রেখে ভাপ দিতে পারেন।
- যখনই পিঠা সিদ্ধ হয়ে আসবে তখন আপনি খাওয়ার জন্য পরিবেশন করতে পারেন।
ভাপা পিঠা তৈরি করার সহজ প্রণালি
ভাপা পিঠা সহজ কোনো প্রণালীর মাধ্যমেও তৈরি করা যায়। এর জন্যে আপনাকে চালের গুঁড়ো, খেজুরের গুড়, লবণ, পানির সাথে পাতিল এবং ঢাকনা সংগ্রহ করতে হবে। প্রয়োজনীয় উপকরণ হিসেবে পাতলা একটি কাপড়ের টুকরাও প্রয়োজন হবে। এর সাথে আপনাকে আপনার পছন্দ অনুযায়ী একটি যেকোন সাইজের বাটি নিতে হবে।
প্রথমে আপনাকে ভাপা পিঠা তৈরি করার জন্য চালের গুঁড়ো খুব ভালোভাবে লবণ এবং পানি দিয়ে মিক্স করে নিতে হবে। যখনই ঝুরঝুরে হয়ে উঠবে তখন চালনি দিয়ে খুব ভালোভাবে আপনাকে এটি চেলে নিতে হবে। কুড়ানো নারকেল এবং খেজুরের গুড় খুব ভালোভাবে কুচি করে রাখতে হবে। পাতিলে খুব বেশি করে পানি দিতে হবে।
পানি ফুটে উঠার পরে আপনাকে পিঠা বানানো শুরু করতে হবে। প্রথমেই একটি বাটিতে চালের গুঁড়ো নিয়ে নিতে হবে এবং এর উপরে আপনাকে নারিকেল আর গুড় নিয়ে নিতে হবে। বিশেষ করে ভিতরে পুর হিসেবে বসিয়ে দিতে হবে। সেই চালের গুঁড়ো খুব ভালোভাবে আবার উপরে দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
এরপর সেই বাটি পাতলা একটি কাপড় দিয়ে খুব ভালোভাবে পেঁচিয়ে আপনাকে গরম করা পানির উপরে পাতিলে বসিয়ে দিতে হবে। ঢাকনা দিয়ে কিছু সময় আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। যখনই এটি সিদ্ধ হয়ে আসবে তখন ঢাকনা না খুলে কাপড় সহ পিঠাটি খুব ভালোভাবে তুলে নিতে হবে।
গরম গরম স্বাদ নিতে চাইলে ধোয়া উঠার সময় ভাপা পিঠা খেতে হবে। যদি আপনি এই পিঠাকে একটু বেশি মজাদার করে তুলতে চান, তাহলে আপনি পানির পরিবর্তে দুধ ব্যবহার করতে পারেন। অথবা দুধের ক্ষিরসা ব্যবহার করতে পারেন। বিভিন্ন রকমের ডিজাইনের জন্যে আপনি চেরি ও কিসমিস ব্যবহার করতে পারেন।
শেষকথা
প্রিয় পাঠক, উপরে উল্লেখিত মজাদার সুস্বাদু গরম গরম ভাপা পিঠা, শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে ঠান্ডায় খেতে নিশ্চয়ই আপনার খুব ভালো লাগবে। প্রচন্ড শীতে গরম ভাপা পিঠা ফুঁ দিয়ে খেতে কতই না মজা লাগতে পারে।
ঘরে বসে খুব সুন্দর ভাবে আপনি এই ভাপা পিঠা তৈরির প্রক্রিয়া জেনে তৈরি করতে পারবেন। বিস্তারিত ভালো লাগলে মূল্যবান মতামত জানাতে পোস্টের নিচে মন্তব্য করুন এবং অজানা কিছু বিষয়ে জানতে ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url