বয়সের ছাপ এবং ব্রণ দূরীভূত করতে আলুর কার্যকারিতা

বয়সের ছাপ এবং ব্রণ দূরীভূত করতে আলুর কার্যকারিতা আদিমকাল থেকেই চলে আসছে। যদি এখনো আপনি বয়সের ছাপ এবং ব্রণ দূরীভূত করতে আলুর কার্যকারিতা সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে খুব শীঘ্রই এই সম্পর্কে ধারণা নিয়ে নিন। কারণ বয়সের ছাপ এবং ব্রণ দূরীভূত করতে আলুর কার্যকারিতা অপরিসীম।
বয়সের ছাপ এবং ব্রণ দূরীভূত করতে আলুর কার্যকারিতা
ত্বক উজ্জ্বল ও টানটান হয়ে থাকলে দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। কিন্তু তা না থেকে যদি চেহারায় অনেক বেশি বলিরেখার ছাপ পড়ে থাকে, চেহারায় বার্ধক্য নেমে আসে তাহলে আপনার প্রশান্তি হারিয়ে যেতে পারে। আলুর তৈরি বিভিন্ন রকমের খাবার সবারই কমবেশি জানা থাকতে পারে। কিন্তু ত্বকের কালো দাগ যে আলুর রস দিয়ে দূর করা যায় তা কতজন জানেন।

পেইজ সূচিপত্র

ভূমিকা

আলুতে থাকা ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি ত্বকের কালো দাগ দূর করে ত্বককে ভিতর থেকে কোলাজেন ধীরে ধীরে বাড়িয়ে দিতে পারে। পাশাপাশি আপনার ত্বককে বিশেষভাবে সুরক্ষা দেয় আলুর রস। কারণ আলুতে উপস্থিত রয়েছে এক ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা আপনার বয়স অনেকখানি কমিয়ে দিতে পারে এবং খুব তাড়াতাড়ি ব্রণের দাগ দূর করতে পারে।

ত্বকে থাকা যত ধরনের মৃতকোষ রয়েছে সব কোষকে খুব সহজেই তুলে ফেলতে সাহায্যে করতে পারে। শুধু তাই নয় আলু যদি গোল করে কেটে চাকতির মাধ্যমে চোখের ডার্ক সার্কেলের উপরে বসিয়ে দিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করেন, তাহলে কিছু দিনের মধ্যেই দেখতে পাবেন দাগ ধীরে ধীরে হালকা হচ্ছে। 


চোখের নিচে যেই পাতলা চামড়া রয়েছে সেখানে ত্বকের কোষগুলো ধীরে ধীরে সতেজ হয়ে উঠছে। যখনই আলুর রস ত্বকে ব্যবহার করা হবে তখনই দেখা যাবে, ত্বকের মধ্যে এক ধরনের টানটান ভাব সৃষ্টি হচ্ছে এবং ত্বকের যেই রুক্ষতা ছিল সেটিও ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। কারণ এখানে জিংক এবং কপারের উপস্থিতি রয়েছে।

এই জিংক এবং কপারের উপস্থিতির কারণে ত্বকের মধ্যে যেই বলিরেখা ছিল, সেইগুলো ধীরে ধীরে কমে ত্বক মসৃণ এবং উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। যখনই ত্বকের বলিরেখা কমে আসবে, তখন ত্বকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি পূরণ হয়ে যাওয়ায় ত্বক হয়ে উঠবে খুব তাড়াতাড়ি ঝলমলে এবং সুন্দর।

উজ্জ্বল ত্বক ফিরে পেতে আলুর ব্যবহার

আপনি কি চান না আপনার ত্বক উজ্জ্বল এবং সুন্দর হোক? যদি উজ্জ্বল ত্বক পাওয়ার ইচ্ছা আপনার মনে থাকে তাহলে আপনি আলুকে রূপচর্চার জন্যে নিজের সঙ্গী করে নিতে পারেন। এই অবস্থায় ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে আপনাকে আলুর ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হবে। সেই উদ্দেশ্যে চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক আলু কিভাবে ব্যবহার করা যায়।

  • উজ্জ্বল ত্বকের জন্যে আপনাকে প্রথমে আলু সংগ্রহ করতে হবে।
  • আলু সংগ্রহ করা হয়ে গেলে খুব ভালোভাবে আলুটি ধুয়ে নিতে হবে।
  • এখন কিন্তু আপনাকে আলুটি খুব ভালোভাবে চামড়া ছাড়িয়ে নিতে হবে।
  • আলুর খোসা রেখে কখনোই আলু ব্লেন্ড করতে যাবেন না।
  • তাহলে আলুর খোসাতে থাকা যেই ধরনের উপাদান রয়েছে, সেইগুলোর কারণে আপনার ত্বকে কালচে ভাব তৈরি হতে পারে।
  • এখন উজ্জ্বল ত্বক ফিরে পাবার জন্যে আপনাকে আলু ভালোভাবে ছেঁচে নিতে হবে।
  • আলুকে খুব ভালোভাবে ছেঁচে নিয়ে সেখান থেকে রস চাপিয়ে নিতে হবে।
  • আলুর রস সংগ্রহ করার পর সেখানে ব্ল্যাকহেডস অথবা হোয়াইটহেডস এর উপস্থিতি রয়েছে সেখানে লাগিয়ে দিতে পারেন।
  • প্রতিদিন এইভাবে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্যে আপনি আলুর রস ব্যবহারের প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে পারেন।
  • কিছুদিনের মধ্যেই খেয়াল করলে দেখতে পাবেন আপনার ত্বক পূর্বের চেয়েও অনেক বেশি উজ্জ্বলতার দিকে যাচ্ছে।

আলুর রস দিয়ে ত্বকের বলিরেখা কিভাবে দূর করবেন

ত্বকের বলিরেখা দূর করতে হলে প্রথমে আপনাকে আলুর রসের সাথে কাঁচা দুধ মিক্স করে নিতে হবে। এর জন্যে আপনার খুব বেশি রকম খাটুনি করতে হবে না। শুধুমাত্র ত্বকের যেইখানে বলিরেখা দেখতে পাচ্ছেন, সেইখানে লাগিয়ে দিবেন। অথবা আপনার কাছে হয়তো মনে হচ্ছে বয়সের ছাপ অনেক বেশি পরিমাণে দেখা যাচ্ছে, তাহলে সেই জায়গায় নিয়মিত এটি লাগিয়ে দিতে পারেন।

যদি আপনি চান তাহলে আলুর সাথে গ্লিসারিনও মিক্স করে রাখতে পারেন। এতে করে দেখা যাবে খুব তাড়াতাড়ি ত্বকের বলিরেখাগুলো দূর হয়ে যাবে। অনেকে দেখা যায় এই আলুর রসের সাথে লেবুর রসও মিক্স করে ব্যবহার করে থাকে। অথবা আলুর রসের সাথে টমেটোর রস খুব ভালোভাবে মিক্স করে একটি মিশ্রণ তৈরি করতে পারেন।


সেই মিশ্রণটি বিশ থেকে পঁচিশ মিনিটের জন্য রেখে দিলে ত্বকের বলিরেখা দূর হয়ে ত্বক ধীরে ধীরে মসৃণ হয়ে উঠতে পারে। এছাড়াও ত্বকের বলিরেখা চিরতরে বিদায় করার জন্যে আলুর রস এবং মধু একসাথে মিক্স করে নিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে ফেলতে পারেন। এতে করে আলুর রসের সাথে আপনি যখন মধু মিক্স করে ব্যবহার করবেন।

তখন ধীরে ধীরে দেখতে পাবেন আপনার বলিরেখা কমে যাচ্ছে। আপনি যদি কুচি করা আলু চেপে নিয়ে সেই রসের সাথে দুধ মিক্স করে ব্যবহার করেন, তাহলে খুব সহজেই আপনার চেহারায় যদি বয়সের ছাপ থাকে সেটিও খুব তাড়াতাড়ি দূরীভূত করা যাবে। খুব তাড়াতাড়ি আপনার ত্বকের বলিরেখা কমে আসবে।

রূপচর্চায় আলুর উপকারিতা কোনগুলো

সেই আদিযুগ থেকেই রূপচর্চার জন্যে আলুর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। যদি আপনি বয়সের ছাপ এবং ব্রণ দূরীভূত করতে আলুর কার্যকারিতা রূপচর্চায় ব্যবহারের জন্যে আলুর কথা চিন্তা করেন, তাহলে অবশ্যই এর সঠিক ব্যবহার জানতে হবে। যেহেতু আলুর ব্যবহার আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতাকে বাড়িয়ে দেয়।

তাই আলুতে থাকা পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন থাকার ফলে এটি আপনার জন্যে খুবই উপকারী হতে পারে। তবে ত্বকের রূপচর্চার কাজে আলুর যেই সকল উপকারিতা রয়েছে তার সম্পর্কে চলুন কিছুটা ধারণা নিয়ে নিই।
 
  • আপনার চোখে যদি কোন কারণে ফোলাভাব তৈরি হয়।
  • যদি আপনি সেটি কমাতে চান তাহলে আলু গোল করে কেটে চোখের উপরে দিয়ে রাখতে পারেন।
  • নিয়মিত ব্রণ নিরাময় করতে আলু খুবই দরকারী।
  • তবে এর জন্যে আপনাকে একটি আলু খুব ভালোভাবে চেপে নিয়ে রস সংগ্রহ করে নিতে হবে।
  • এরপর লেবুর রস খুব ভালোভাবে চিপে নিয়ে ত্বকে লাগিয়ে দিতে হবে।
  • ত্বকের ক্লিনজার হিসেবে আপনি আলুর রস ব্যবহার করতে পারেন।
  • পাশাপাশি নিয়মিত ঘরোয়া ফেসওয়াশ হিসেবে কাজে লাগবে।

ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে মধু এবং আলুর রস

ত্বকের পরিচর্যা করতে হলে আপনাকে আলুর প্রক্রিয়া সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানতে হবে। এটির জন্যে প্রয়োজন আলু যা ভালোভাবে চেপে রস করে, এর সাথে মধু এবং আরো অন্যান্য কিছু উপাদান মিক্স করে আপনি ত্বকের তৈলাক্ত আভাকে দূর করে দিতে পারেন। বিশেষ করে আপনার যদি কোন কারণে ত্বকের উজ্জ্বলতা হারিয়ে যেয়ে থাকে।

তাহলে খুব ভালোভাবে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে পারেন। যখনই খুব ভালোভাবে পরিষ্কার হয়ে আসবে, তখন এর সাথে আপনি বেকিং সোডাও মিক্স করে নিতে পারেন। বেকিং সোডার ক্ষেত্রে অবশ্যই মধু নিয়ে নিতে হবে। এখন আপনার ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে আলু এবং মধু অত্যন্ত ভালোভাবে কার্যকরী হয়ে থাকে।

বিশেষ করে ত্বকের ময়েশ্চারাইজার বাড়ানোর জন্যে ত্বকের তেলতেলে ভাব অনেক বেশি পরিমাণে দূর করে দেয়। যখনই মধুর সাথে আপনি আলুর রস ব্যবহার করে ত্বকে লাগাবেন, তখন আপনার তৈলাক্ত ভাব দূর হবে। শুধু তাই নয় আপনার ত্বকে যদি মরা চামড়া থাকে, তাহলে সেইগুলো উঠে চলে আসবে। আপনি চাইলে মধু এবং আলুর রসের সাথে লেবুর রসও ব্যবহার করতে পারেন।

আলুর রস দিয়ে কি ফেসপ্যাক তৈরি করা যায়

সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষ করে আপনার ত্বক হয়ে যেতে পারে অনেক বেশি রুক্ষ। হয়তো ভাবছেন যে কিভাবে এই রুক্ষতা দূর করবেন? এই রুক্ষতা সম্পর্কে যদি নিজে নাই জানেন, তাহলে কিভাবে সমস্যার সমাধান হবে। আলুর রস ব্যবহার করে খুব সহজেই ফেসপ্যাক তৈরি করা যায়। যদি আপনার এই সম্পর্কে কোন কিছু একদমই না জানা থাকে, তাহলে এখনই নিম্নরূপ থেকে জেনে নিন।

  • যদি আপনি একটি আলুকে খুব ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে পারেন তাহলে ফেসপ্যাক তৈরি করা যায়।
  • এই পেস্টের সাথে আপনি চাইলে টমেটোর পেস্ট মিক্স করে নিতে পারেন।
  • যখনই পেস্টটি তৈরি হয়ে যাবে তখন এর সাথে খুব ভালো করে টক দই মিশিয়ে নিয়ে ত্বকে নিয়মিত লাগাতে পারেন।
  • এছাড়াও রয়েছে অন্য আরেকটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আপনি নতুনভাবে ফেসপ্যাক তৈরি করতে পারেন।
  • এই পেস্টটি একটু তৈরি করতে হলে আপনি দুধের সরের সাথে খুব ভালোভাবে আলুর পেস্ট মিশিয়ে নিতে পারেন।

ব্রণকে প্রতিরোধ করতে আলুর রস

ব্রণকে দূরীভূত করতে আলুর রস এর ফেসপ্যাক প্রয়োজন হতে পারে। এর জন্যে অবশ্যই আপনাকে মধু সংগ্রহ করে রাখতে হবে এবং এর সাথে খুব ভালোভাবেই আলু চাপিয়ে নিয়ে রস হাতের নাগালে রাখতে হবে। যখনই আপনার হাতের নাগালে আলুর রস থাকবে তখন খুব সহজেই কিন্তু আপনি এটিকে প্রতিরোধ করার জন্যে ত্বকে খুব সহজেই লাগাতে পারবেন।


বিশেষ করে মুখেই অনেক বেশি পরিমাণে ব্রণ হয়ে থাকে। যার ফলে দেখতে খুবই অসুন্দর লাগে। কেউই চায় না তার ত্বক দেখতে খারাপ দেখা যাক। সেই জায়গা থেকে অবশ্যই ত্বকের প্রতি যত্নশীল হলে এই ব্রণকে খুব সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। এর জন্যে প্রয়োজন নিয়মিত ফেসপ্যাক ব্যবহার করা।

পরিশেষে

প্রিয় পাঠকগণ, এই অনুচ্ছেদ থেকে বয়সের ছাপ এবং ব্রণ দূরীভূত করতে আলুর কার্যকারিতা যে কতটুকু উপকারে আসতে পারে তা জেনে নিশ্চয়ই এখন সমস্যাগুলো নিরসন করতে পারবেন। নিজেকে দুশ্চিন্তা মুক্ত মনে হলে আপনার বন্ধুদের মাঝে বিস্তারিত শেয়ার করে দিতে পারেন। মূল্যবান মতামত জানাতে পোস্টের নিচে মন্তব্য করুন এবং নতুন তথ্য জানতে ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url