হাড় কাঁপানো শীতে খেজুরের রসে বানানো তেলের পিঠা

এই হাড় কাঁপানো শীতে খেজুরের রসে বানানো তেলের পিঠার স্বাদ আপনার অজানা থাকতেই পারে। কিন্তু তাই বলে কখনো খাবেন না তা কি হয়? হাড় কাঁপানো শীতে খেজুরের রসে বানানো তেলের পিঠা কমবেশি সবার কাছেই প্রিয়। তাই হাড় কাঁপানো শীতে খেজুরের রসে বানানো তেলের পিঠা নিয়েই দেখুন আজকের অনুচ্ছেদ।
হাড় কাঁপানো শীতে খেজুরের রসে বানানো তেলের পিঠা
গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহরাঞ্চলে সব জায়গায় এই পিঠার বেশ চাহিদা রয়েছে। অন্যান্য যেই সকল পিঠা তৈরি করা হয় ঠিক তার মত করেই এই পিঠার চাহিদা সব জায়গায় দেখা যায়। অনেকে মজা করে এই পিঠার বিভিন্ন নামকরণও দিয়ে থাকে। এই পিঠা বানানোর পর অনেক সুন্দর করে ফোলে উঠে বিধায় খেতে খুবই আগ্রহ অনুভব হতে পারে।

পেইজ সূচিপত্র

ভূমিকা

ঘন কুয়াশায় হাড় কাঁপানো শীতে খেজুরের রস দিয়ে তেলের পিঠা প্রতিটি ঘরে বেশ ধুমধাম করে বানানো হয়। এই বাহারি রকমের পিঠার মধ্যে তেলের পিঠা খুবই জমে উঠে। মজাদার এবং মুচমুচে হওয়ায় এই পিঠা সকলেরই বেশ পছন্দ। বেশিরভাগ সময়েই দেশীয় এই পিঠাগুলো সব জায়গায়ই আনাচে কানাচে বানাতে দেখা যায়।


শীতের সময় এলেই তেলের পিঠা বানানোর দোকান গুলোতে অনেক ভিড় হয়ে থাকে। আতপ চালের গুঁড়ো দিয়ে বিভিন্ন রকমভাবে এই সুস্বাদু তেলের পিঠা তৈরি করা হয়। আখের গুড় অথবা খেজুরের গুড়, খেজুরের রস সবকিছু মিলিয়ে এই তেলের পিঠার স্বাদ হয়ে উঠে সুস্বাদু। মাঝে মাঝে কিছু রেস্তোরাঁতেও এই তেলের পিঠা সাজিয়ে রাখতে দেখা যায়।

খেজুরের রসে তেলের পিঠা যেভাবে তৈরি হয়

খেজুরের রস দিয়ে মজাদার এই তেলের পিঠা তৈরি করা হয়। তবে এর কিছু প্রয়োজনীয় উপকরণ রয়েছে, যার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই এই তেলের পিঠা তৈরি করতে পারবেন। খেজুরের রস ব্যবহারের মাধ্যমে তেলের পিঠা খুব সহজে কিভাবে তৈরি করবেন তার একটি সহজ নির্দেশনা চলুন দেখে আসি।

  • প্রায় দুই কাপের মতো চালের গুঁড়ো নিতে পারেন।
  • এর সাথে ময়দা হাফ কাপ এবং খেজুরের গুড় রাখতে পারেন।
  • পানির বদলে পরিমাণমতো খেজুরের রস ব্যবহার করতে পারেন।
  • লবণ, বেকিং সোডা এবং ভাজার জন্যে তেল নিয়ে নিতে পারেন।
  • একটি পাত্রে কিছু সময়ের জন্যে হালকা গরম পানি করতে পারেন।
  • গরম পানি হয়ে গেলে ভালো করে উপকরণ গুলো দিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ করে নিতে পারেন।
  • পাত্রের তেল গরম করা অবস্থায় কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।
  • তেল গরম হয়ে আসলে একটি করে পিঠা তেলে ছেড়ে দিতে হবে।
  • বড় একটি চামচ দিয়ে মিশ্রণটিকে নাড়াচাড়া করতে হবে।
  • কিছু সময়ের মধ্যেই তেলে দেওয়া পিঠাটি ফোলে উঠতে শুরু করবে।
  • পিঠার দুইপাশে যখন উল্টাপাল্টি দিবেন তখন দেখবেন পিঠাটি খুব ভালোভাবে হয়ে আসছে।
  • এই অবস্থায় তেলের পিঠা গরম গরম খাওয়ার জন্য পরিবেশন করতে পারেন।

খেজুর গুড়ের তেলের পিঠার টিপস

তেলের পিঠা একটু মিষ্টি হয় যেহেতু তাই অনেকের কাছেই এটি খুব পছন্দের পিঠা। এই পিঠা কিভাবে বানাতে হয় তার সঠিক টিপস না জানার কারণে অনেকেই সুন্দর করে এই পিঠা বানাতে পারেনা। দেখা যায় পিঠা বানায় ঠিকই কিন্তু ভিতরে পিঠা কাঁচা থেকে যায়। যার ফলে পিঠার সঠিক স্বাদ পায়না এবং পিঠা বানানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।


এইজন্যে খেজুরের গুড় মিক্স করে তেলের পিঠা সুন্দর করে বানাতে হলে কোন পাত্রে চালের গুড়া, ময়দা নিয়ে নিতে হবে। আপনি চাইলে এর সাথে খেজুরের গুড়, দুধ এবং সামান্য পরিমাণে লবণ ব্যবহার করতে পারেন। এর ফলে পিঠাটি বানাতে খুব সহজ হবে। পিঠাটি বানাতে হলে প্রথমে একটি কড়াই নিতে হবে।

কড়াইয়ে তেল গরম করার পর আপনি যেই জায়গায় মিশ্রণটি গুলিয়েছেন, সেখান থেকে একটি চামচ দিয়ে ছাড়তে হবে। খেয়াল করে দেখবেন কিছু সময়ের মধ্যে পিঠাটি ফোলতে শুরু করবে। দুই পাশে খুব ভালোভাবে উল্টেপাল্টে ভেজে নিতে হবে যেন ভিতরে কাঁচা না থাকে। ভাজার পর এমন কিছুর উপর পিঠাটি রাখবেন যেখান থেকে খুব সহজেই তেল ঝরে আসবে।

খেজুরের গুড় এবং নারকেল দিয়ে তেলের পিঠা

কখনো কি নারকেল দিয়ে তেলের পিঠা খেয়ে দেখেছেন? কুড়ানো নারকেল দিয়ে খেজুরের গুড় মিক্স করে তেলের পিঠা কেমন হয় তা না খেলে কখনোই বুঝতে পারবেন না। তেলের পিঠায় নারকেল ব্যবহার করার কারণে এই পিঠার স্বাদ তিনগুণ বেড়ে যায়। খেজুরের গুড় এবং নারকেলের তেলের পিঠার পদ্ধতি নিম্নরূপে দেখুন।

  • আতপ চালের গুঁড়ো নিয়ে এর সাথে খেজুরের গুড়, নারকেল এবং অন্যান্য উপাদানগুলো নিতে হবে।
  • পরিমাণ মতো কুড়ানো নারকেল এর সাথে ময়দা, লবণ ভাজার জন্যে তেল রাখতে হবে।
  • প্রথমে আধা কাপ কিছু চাউলের গুঁড়ো নিয়ে পানিতে সিদ্ধ করে একটি কাই তৈরি করে নিতে হবে।
  • সিদ্ধ হয়ে আসার পর সেই পানিতে খেজুরের গুড় ভেঙে দিতে হবে, কুড়ানো নারকেল দিয়ে দিতে হবে।
  • খুব ভালো করে জাল করে ঠান্ডা করে রাখতে হবে।
  • ঠান্ডা হয়ে গেলে এটিকে একটি পাত্রে রেখে তেল গরম করে নিতে হবে।
  • তেল গরম হয়ে আসলে একটি ডাবানো চামিচ দিয়ে খুব ভালোভাবে গোলাকে নাড়াচাড়া করে রাখতে হবে।
  • পিঠা যখন খুব ভালোভাবে ফোলে উঠবে তখন চুলার আঁচ একটু কমিয়ে দিতে হবে।
  • খুব ভালোভাবে নাড়াচাড়া করে দেখতে হবে পিঠা কাঁচা রয়েছে কিনা।
  • যখন হয়ে আসবে তখন আপনি তেলে ভাজা পিঠা তুলে ঠান্ডা করে খেতে পারেন।

নরম তুলতুলে মজাদার তেলের পিঠা

মজাদার সুস্বাদু নরম তুলতুলে তেলের পিঠা কার না ভালো লাগে। সবারই তুলতুলে তেলের পিঠা খেতে ইচ্ছে করে। তবে এই তুলতুলে তেলের পিঠা তৈরি করার জন্যে আপনাকে সঠিকভাবে তেলের পিঠা তৈরির প্রস্তুতি নিতে হবে। চালের গুড়ো, ময়দা, দুধ একসাথে মিক্স করে এর সাথে খেজুরের গুড় চাইলে মিক্স করতে পারেন।

এতে করে পিঠাতে একটি সুন্দর ঘ্রাণ পাবেন যার ফলে পিঠা খেতে খুব ভালো লাগবে। যখন আপনি সবগুলো উপকরণ একসাথে মিক্স করে নিবেন, তখন একটি পাতলা ব্যাটার তৈরি করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন এই ব্যাটারটি খুব বেশি পাতলা অথবা খুব বেশি ঘন না হয়ে যায়। যদি খুব বেশি ঘন হয়ে যায়।

ফলে হাড় কাঁপানো শীতে খেজুরের রসে বানানো তেলের পিঠা ভিতর থেকে কাঁচা থাকার সম্ভাবনা থাকে এবং খুব বেশি পাতলা হলে পিঠাটি খুব ভালোভাবে ফোলে উঠে না। যার ফলে পিঠা খাওয়ার পরিপূর্ণ স্বাদ পাওয়া যায় না এবং পিঠাটিও নরম তুলতুলে হয় না। কিছু সময় পরপর এই ব্যাটার ভালোভাবে বিট করে নিতে হবে।

চুলায় একটু হালকা তাপে গরম তেল দিয়ে এর মধ্যে পিঠা দিয়ে দিতে হবে। খেয়াল করলে দেখবেন কিছু সময় পর পিঠাটি খুব ভালোভাবে ফোলে উঠছে। তবে যদি আপনার ব্যাটার ভালো হয় তবেই পিঠা সুন্দর হবে এবং নরম তুলতুলে হবে।

খেজুরের গুড় দিয়ে তেলের পিঠার রেসিপি

গুড় অথবা চিনি দিয়ে তো পিঠা বানিয়ে থাকেন, কিন্তু খেজুরের গুড় দিয়ে কি কখনো পিঠা বানিয়ে খেয়েছেন? খেজুরের গুড় খাঁটি চাল এর সাথে মিক্স করে যদি পিঠা বানাতে পারেন, তাহলে পিঠার স্বাদ মুখে দিলে কখনোই ভুলবেন না। বিস্তারিত চলুন দেখি।

  • নিখুঁত করে তেলের পিঠা বানাতে হলে আপনাকে প্রথমে খেজুরের গুড় ছোট ছোট করে কেটে নিতে হবে।
  • অল্প একটু পানি দিয়ে তারপর চুলায় হালকা আঁচে বসিয়ে দিতে হবে।
  • দেখতে পাবেন অল্প সময়ের মধ্যে গুড় ধীরে ধীরে গলতে শুরু করেছে। আপনি যদি খাঁটি খেজুরের গুড় ব্যবহার করতে পারেন তাহলে অল্পতেই খুব মিষ্টি হবে।
  • যেকোন একটি পাত্র নিয়ে এর মধ্যে চালের গুঁড়ো এবং ময়দা ভালো করে মিক্স করে বেকিং পাউডার এবং লবণ যুক্ত করুন।
  • সবগুলো উপাদান মিক্স করে একটি ব্যাটার তৈরি হলে পিঠা তৈরি করার জন্যে আপনি এখন প্রস্তুত।
  • অবশ্যই এইক্ষেত্রে আপনাকে ব্যাটারের ঘনত্ব ঠিক রাখতে হবে।
  • একটি তেলের কড়াইয়ে আপনাকে ডুবোডুবি তেলে ভাজতে হবে।
  • ডুবোডুবি তেল না দিলে কিন্তু আপনার পিঠা খুব ভালোভাবে ফোলে উঠবে না।
  • মাঝারি আঁচে করে তেল ভালো করে গরম করে নিয়ে পিঠা ছাড়তে হবে।
  • গোপন কৌশল হিসেবে আপনাকে পিঠাটি ছাড়ার সময় চামচ একটু নিচু করে রাখতে হবে।
  • ব্যাটার ঢালার ক্ষেত্রে আপনাকে উঁচুতে রেখে ঢালার চেষ্টা করতে হবে।
  • এই অবস্থায় আপনার পিঠাটি অনেক সুন্দর ও গোলাকার আকার ধারণ করে ফোলে উঠবে।
  • ভালোভাবে দেখতে হবে দুই পাশ হয়েছে কিনা উল্টে পাল্টে বারবার দেখতে হবে।
  • পিঠাটি হয়ে আসলে তেল ঝরিয়ে নিতে হবে।

গুঁড়ো দুধে খেজুর রসে মুচমুচে তেলের পিঠা

গুঁড়ো দুধ দিয়ে খেজুরের রস মাখা করে তেলের পিঠা কখনো বানিয়ে দেখেছেন। যদি গুঁড়ো দুধ মিক্স করে খেজুরের রস দিয়ে তেলের পিঠা খেয়ে না থাকেন, তাহলে একবার খেয়ে দেখবেন পিঠা কতটা মজা হয়। শুধু তাই নয় পিঠা কতটা মুচমুচে হয়ে থাকে বুঝতে পারবেন। যদি আপনি সঠিক কৌশল অবলম্বন করে পিঠা তৈরি করেন তাহলে পিঠা ভিতর থেকে কখনোই কাঁচা থাকবে না।

ভিতর থেকে পিঠাটি কাঁচা থাকার সমস্যাটা অনেক বেশি লোকের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। দেখা যায় পিঠার উপকরণ ব্যবহার করেছে ঠিকই, কিন্তু পিঠা বানানোর পর ভিতর থেকে কাঁচা থাকে। যার ফলে তখন পিঠাটি খেতে আর ভালো লাগেনা এবং পিঠা মুচমুচে না হলে পিঠা খাওয়ার খুব বেশি একটা স্বাদ পাওয়া যায় না।


গুঁড়ো দুধ এবং খেজুরের রস, প্রয়োজন মতো চিনি, কুসুম গরম পানি, বেকিং পাউডার, চালের গুঁড়ো, ময়দা, লবণ সবগুলো উপাদান একসাথে মিক্স করে নিয়ে একটি ব্যাটার তৈরি করতে হবে। যখনই ব্যাটার তৈরি হয়ে যাবে, তখন খেয়াল করে দেখবেন ব্যাটার কতটুকু ঘনত্ব হয়েছে। ঘনত্বের উপর নির্ভর করে পিঠার স্বাদ বাড়বে।

ব্যাটার তৈরি হয়ে আসলেই পিঠাটি তেলে ছেড়ে দেওয়ার জন্যে প্রস্তুত হলে, একটি পিঠা তাহলে তেলে দিয়ে ভাজতে পারেন। ভাজা হয়ে আসলে উল্টাপাল্টা করে দেখতে হবে দুই দিকে ভাজা ঠিক হয়েছে কিনা। যদি ভাজা ঠিক থাকে তাহলে গরম গরম এই মুচমুচে তেলের পিঠা খাওয়ার জন্য পরিবেশন করতে পারেন।

শেষকথা

প্রিয় পাঠকগণ, হাড় কাঁপানো শীতে খেজুরের রসে বানানো তেলের পিঠা কত উপায়ে করা যায় তার কিছু বিস্তারিত নিশ্চয়ই পড়ে আপনার জন্যে এখন পিঠা বানানো সহজ হয়েছে। যদি আপনি পিঠা সঠিক উপায়ে বানিয়ে থাকেন এবং উপকৃত হয়ে থাকেন।

তাহলে আপনার আশেপাশের সকলকে এই রেসিপি শেয়ার করতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ মতামত জানাতে পোস্টের নিচের অংশে মন্তব্য করতে পারেন এবং নতুন কিছু টিপস জানতে ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url