ঠান্ডা পানির সাথে খালি পেটে কি লেবু খাওয়া ঠিক
ঠান্ডা পানির সাথে খালি পেটে কি লেবু খাওয়া ঠিক কতটুকু জানেন? এই অনুচ্ছেদে ঠান্ডা পানির সাথে খালি পেটে কি লেবু খাওয়া ঠিক কিনা এই সম্পর্কে বিস্তারিত দেখুন। ঠান্ডা পানির সাথে খালি পেটে কি লেবু খাওয়া ঠিক এই বিষয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়ে পানিশূন্যতা দূর করে নিজেকে সুস্থ ও সতেজ রাখুন।
পুষ্টির ঘাটতি দূর করে ঠান্ডা পানির সাথে খালি পেটে লেবু খাওয়া একটি অসাধারণ পানীয়। কিন্তু পানি যদি অতিরিক্ত ঠান্ডা হয় তাহলে সেটিও সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। হতে পারে বিভিন্ন ধরনের ঠান্ডা, কাশি, সর্দিসহ আরো কিছু সমস্যা। অনেক সময় অ্যাসিডিটির মতো সমস্যাও অতিরিক্ত ঠান্ডা লেবু পানি খাওয়ার ফলে হয়ে যায়।
পেইজ সূচিপত্র
ভূমিকা
ঠান্ডা পানিতে লেবু মিক্স করলে খেতে নিশ্চয়ই আপনার খুবই ভালো লাগে। বিশেষ করে গরমের সময়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে লেবুর পানীয় খেতে অত্যন্ত মজাদার হতে পারে। হজম শক্তি বাড়ানোর জন্যে লেবুর পানি অনেক বেশি কার্যকর হতে পারে। কিন্তু যাদের ঠান্ডার অনেক বেশি সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি খাওয়া অনেক বেশি পরিমাণে বিপদজ্জনক হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ হালকা গরম পানিতে লেবুর পানি কেন
কারণ এই সামান্য ঠান্ডা পানি যদিও আপনাকে তৃপ্তি দিতে পারে। কিন্তু যদি শ্বাসকষ্ট অথবা সর্দি কাশির মতো সমস্যা শুরু হয়ে যায়, তাহলে তা কিন্তু সারানো বেশ কঠিন হয়ে যেতে পারে। অনেকে আবার লেবুর রস মিক্স করে ঠান্ডা পানীয় খাওয়ার জন্যে বরফের ট্রেতে জমিয়ে রাখে। যাতে করে ঠান্ডা লেবুর মিশ্রণে তৈরি জুস খেতে পারে।
খালি পেটে ঠান্ডা লেবু পানির কার্যকারিতা
খালি পেটে ঠান্ডা লেবু পানি খেলে শুধু যে সমস্যা হয় তা কিন্তু নয়। লেবুর রস এবং বরফ মিক্স করে বাজারেও লেবুর জুস বিক্রি করতে দেখা যায়। অনেকেই গরমের সময়ে প্রশান্তির জন্যে এই ঠান্ডা লেবুর শরবত খেয়ে থাকে। তবে খালি পেটে ঠান্ডা লেবু পানির যেই ধরনের উপকারিতা রয়েছে চলুন সেই ব্যাপারে একটু জেনে আসি।
- খালি পেটে ঠান্ডা লেবুর পানি আপনার প্রাণ জুড়িয়ে দিতে পারে।
- যার ফলে আপনি প্রশান্তি অনুভব করতে পারেন।
- পানির ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্যে ঠান্ডা লেবু পানি মাঝে মাঝে খেতে পারেন।
- তবে সবসময় ঠান্ডা লেবুর পানি না খাওয়াই ভালো। এতে করে সর্দি, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট লাগার সম্ভাবনা রয়েছে।
- লেবুতে পর্যাপ্ত পটাশিয়াম এবং ফসফরাস থাকার কারণে এটি আপনার শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সাহায্যে করে।
- যদি আপনি ঠান্ডা পানিতে লেবু পানি খাওয়ার চেষ্টা করেন তাহলে ওজন ধীরে ধীরে কমতে পারে।
- লেবু পানি খাওয়ার ফলে আপনি ডিহাইড্রেশন এর মত সমস্যা থেকেও বাঁচতে পারেন।
- কারণ এটি আপনার শরীরের ক্লান্তি, মাথাব্যথা এবং স্ট্রোক থেকে শুরু করে আরও অনেক ধরনের সমস্যাকে দূরীভূত করতে পারে।
- লেবুতে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি থাকায় এটি ফ্ল্যাভোনয়েড নামক উপাদানকে খুব সহজেই বাধা দেয়।
ঠান্ডা পানির সাথে কি লেবু খাওয়া ঠিক নয়
প্রশান্তি পাওয়ার জন্য ঠান্ডা পানির সাথে আপনি লেবু খেতেই পারেন। যদিও লেবু পানির কখনো তুলনা করে শেষ করা যাবে না। কিন্তু যদিও এই লেবু আকারে ছোট হয়ে থাকে, এই লেবুর রস খাওয়া সত্যিই মজাদার। বিশেষ করে গরমের সময়, তবে যারা লেবু দিয়ে আচার খেতে পছন্দ করে তারাও খেতে পারেন।
এইক্ষেত্রে দেখা যায় ঠান্ডা পানি দিয়ে লেবুর রস খাওয়ার ফলে কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে সর্দি কাশি তো রয়েছেই। এর মধ্যে হজমেও নানা রকমের সমস্যা হতে পারে। তবে শরীরে পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিনের প্রয়োজন হলে লেবুর রস খুব কাজে আসে কিন্তু ঠান্ডা পানি দিয়ে যখন লেবুর রস খাবেন।
আরো পড়ুনঃ ওজন কমাতে লেবুর পানি কতটুকু কার্যকর
সেইক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার শরীরের সুস্থতার কথা চিন্তা করে খেতে হবে। কারণ অনেক সময় দেখা যায় যাদের সাইনাসের সমস্যা থাকে, তাদের ক্ষেত্রে এলার্জি হয়ে যেতে পারে। অনেক বেশি পরিমাণে লেবু ব্যবহার করা হয়ে থাকে তবে যদিও এটি খাবার ভারী খাবারের সাথে খাওয়া হয়।
কিন্তু যখন খাবেন আপনি ঠান্ডা পানির সাথে জুস করে খাবেন। তখন যেই রকম ভালো হতে পারে, সেই রকম কিন্তু আপনার শরীরের ক্ষতি সাধনও করতে পারে। তাই ঠান্ডা পানির সাথে খালি পেটে কি লেবু খাওয়া ঠিক কিনা তা বুঝে শরীরের অবস্থাকে বিবেচনা করে ঠান্ডা পানি দিয়ে লেবুর রস খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
প্রাকৃতিক উপাদান লেবু এবং ঠান্ডা পানি কিভাবে কাজ করে
লেবু এবং ঠান্ডা পানি এমন একটি প্রয়োজনীয় উপাদান যা গরমের প্রশান্তি থেকে আপনাকে মুক্তি দেয়। প্রাকৃতিক উপাদান মূলক এই ছোট আকারের ফলটি ভিটামিন সি তে ভরপুর। তাই এই প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে লেবু এবং ঠান্ডা পানি আপনার শরীরে কতোভাবে কাজে লাগতে পারে তার একটি বিশেষ নমুনা চলুন নিচে দেখে আসি।
- যখন আপনি বার্ধক্যে পরিণত হবেন অর্থাৎ আপনার বয়স যখন বেড়ে যাবে তখন অনেকেরই হজম ক্ষমতা খুব বেশি থাকে না।
- এই অবস্থায় আপনার পাকস্থলীতে খাবারকে খুব ভালোভাবে হজম করতে ঠান্ডা পানি এবং লেবু খুব বেশি সাহায্যে করে থাকে।
- গবেষণা করে লেবু থেকে যেই পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায় বলে জানা গিয়েছে সেটি হজম শক্তির জন্যে খুবই প্রয়োজন।
- যদি আপনার লিভারে অনেক বেশি পরিমাণে বর্জ্য জমা হয়ে যায়, তাহলে সেখান থেকেও অতিরিক্ত বর্জ্য কমিয়ে দিতে পারে এবং ফ্যাট কমাতে সাহায্যে করে।
- ঠান্ডা পানি এবং লেবু মিশ্রিত জল মুখের দুর্গন্ধ হওয়া থেকে আপনাকে রক্ষা করে।
- কারণ অনেক সময় দেখা যায় মুখের ভিতর অতিরিক্ত ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার লাভ হলে খুব বেশি দুর্গন্ধ হতে পারে।
- যখন আপনি ঠান্ডা পানি এবং লেবু মিক্স করা জল খাবেন, তখন লেবুতে থাকা অ্যাসিড দাঁতের এনামেলকে নষ্ট করে দিতে পারে।
- প্রাকৃতিক উপাদান লেবু এবং তার সাথে ঠান্ডা পানি আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে ত্বককে ঝকঝকে করে তোলে।
- শরীরে টক্সিন নামক বিষাক্ত পদার্থকে প্রতিরোধ করতে লেবু এবং ঠান্ডা পানি খুব ভালো কাজ করে।
মধুর সঙ্গে ঠান্ডা পানি ও লেবু কি ওজন কমায়
মধুর সঙ্গে যদি আপনি ঠান্ডা পানি এবং লেবু মিক্স করে খেতে পারেন, এটি আপনার শরীরের জন্য অনেক বেশি কার্যকরী হতে পারে। কারণ লেবুতে একদিকে যেমন রয়েছে ভিটামিন সি ঠিক তেমনি মধুতেও রয়েছে, এক ধরনের অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল। যার প্রভাবে আপনার শরীরে সুস্থতা খুব সহজেই বজায় থাকবে।
এছাড়াও শরীর যখন আপনি ঠান্ডা পানি দিয়ে লেবু মিক্স করে মধু মিশিয়ে খাবেন, তখন এর ফলে আপনার শরীরের কার্যাবলী খুব ভালোভাবে বেড়ে উঠে। এর ফলে ধীরে ধীরে আপনার ওজন কমতে থাকে অর্থাৎ মেদ হ্রাস পেতে থাকে। যেহেতু শুধু এটি ওজনই কমায় না আরও অনেক ধরনের সমস্যার সমাধান করতে পারে।
কিন্তু অবশ্যই ঠান্ডা পানি দিয়ে লেবু এবং মধু খাওয়ার ক্ষেত্রে একটু সতর্ক হয়ে নেবেন। কারণ এটি এমন একটি ক্যালোরি যা আপনার ওজন ঠিকই কমাতে সাহায্যে করে। কিন্তু অতিরিক্ত বেশি পরিমাণে খেলে আপনার কিডনি ড্যামেজ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই শরীরের পেট কমানোর স্বার্থে ঠিক যতোটুকু প্রয়োজন, সেই পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
ঠান্ডা পানির সাথে মিক্স করে মধু দিয়ে লেবু
যদি ঠান্ডা পানির সাথে লেবু পানি খাওয়ার ইচ্ছে থাকে, তাহলে পানীয় হিসেবে খেতে পারেন। এতে করে যখন আপনি লেবু ঠান্ডা পানির সাথে মিক্স করে মধু দিয়ে খাবেন, তখন পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি এর পুষ্টি শরীরে পাবেন। ঠান্ডা পানির সাথে মধু মিক্স করে যে লেবু খাবেন তার সঠিক পদ্ধতি চলুন দেখি।
- প্রথমে আপনাকে ফ্রিজার থেকে বরফ সংগ্রহ করতে হবে।
- যখনই বরফ সংগ্রহ হয়ে যাবে এর মধ্যে আপনি চার থেকে পাঁচটি বরফের টুকরো নিতে পারেন।
- বরফের টুকরা গুলোকে একটি গ্লাস এর মধ্যে নিয়ে নিতে পারেন।
- এর মধ্যে একটি আস্ত লেবুর রস ভালোভাবে চেপে দিয়ে দিতে পারেন।
- যখনই লেবুর রস দেওয়া হয়ে যাবে এর মধ্যে এক চামচ মধু দিতে পারেন।
- মধু দিয়ে দেওয়ার পর খুব ভালোভাবে চামচ দিয়ে নাড়তে থাকুন।
- যখন এটি সম্পন্ন হয়ে যাবে তখন আপনি লেবুর রস দিয়ে মধু মিশ্রিত ঠান্ডা শরবত খেতে পারেন।
ঠান্ডা পানির সাথে অতিরিক্ত লেবুর অপকারিতা
যদি অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে মনে রাখবেন, আপনার দাঁত খুব তাড়াতাড়ি এনামেল এর আক্রমণে ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এই সমস্যাকে দূর করতে প্রতিদিন সকালে আপনাকে একবার ব্রাশ করতে হবে এবং রাতে আরেকবার ব্রাশ করতে হবে। যদি আপনার দাঁতের উপরের অংশে সাদা এক রকমের স্তর পড়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ পেট ভরা অবস্থায় লেবুর পানি খাচ্ছেন
তাহলে ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে। নিয়মিত যখন আপনি অতিরিক্ত লেবু খাবেন তখন হঠাৎ করে দেখলে বুঝতে পারবেন, আপনার মুখের যেই কোষ রয়েছে সেইগুলো ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অর্থাৎ আপনার মুখে এক ধরনের ফোড়া মাঝে মাঝে উঠছে দেখতে পাবেন। পেট খারাপের মত সমস্যাও ঠান্ডা পানির সাথে লেবু পানি খেলে হতে পারে।
পরিশেষে
প্রিয় পাঠক, মনোযোগ দিয়ে নিশ্চয়ই বিস্তারিত পড়ে একটি ধারণা নিয়ে ফেলেছেন যে ঠান্ডা পানির সাথে খালি পেটে কি লেবু খাওয়া ঠিক কিনা। স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিজে সচেতন হয়ে আশেপাশের সকল বন্ধুদের মাঝে খালি পেটে ঠান্ডা পানি দিয়ে লেবু খাওয়ার বিষয়টি শেয়ার করতে পারেন।
লেবুর পানি খায় না এইরকম খুব কম লোকই খুঁজে পাওয়া যাবে। তাই লেবুর পানি সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ে ভালো লেগে থাকলে, আপনার মূল্যবান মতামত আমাদের জানাতে পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন এবং অজানা বিষয় জানতে ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url