খুব বেশি ভিটামিনের অভাব হলে কোন খাবার প্রয়োজন
খুব বেশি ভিটামিনের অভাব হলে কোন খাবার প্রয়োজন তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। দুর্বলতার কারণে খুব বেশি ভিটামিনের অভাব হলে কোন খাবার প্রয়োজন তা না জানলে দুর্বলতা দূর করবেন কিভাবে? তাই আপনাদের খুব বেশি ভিটামিনের অভাব হলে কোন খাবার প্রয়োজন সেই বিষয়ে আজকের পোস্টে থাকছে বিস্তারিত ব্যাপক আলোচনা।
বিভিন্ন খাবারের মাধ্যমে আমাদের শরীরে ভিটামিন প্রবেশ করে থাকে। যদি সেই সকল খাবারের ঘাটতি শরীরে রয়েই যায় তার প্রভাব শরীরে খুব দ্রুত পড়ে যায়। পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কমে যায় এবং সহজেই একজন ব্যক্তি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। শরীরের ভিতর থেকে নিজেকে সুস্থ রাখতে ভিটামিনের অভাব পূরণে অনুচ্ছেদটি পড়তে পারেন।
পেইজ সূচিপত্র
ভূমিকা
ভিটামিন হচ্ছে এমন একটি উপাদান যা আপনার শরীরের প্রতিটি অংশে কাজে লাগবে। দৃষ্টিশক্তি, স্মৃতিশক্তি, দুর্বলতা, বন্ধ্যাত্ব এবং গর্ভধারণের সমস্যা, বেশি করে গলা এবং বুকে সংক্রমিত হওয়া, কোথাও কেটে গেলে ক্ষত নিরাময় করা থেকে শুরু করে শরীরের যেকোন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে।
আরো পড়ুনঃ ডালিম কিভাবে রক্তে প্লাটিলেটের ঘাটতি কমায়
প্রতিদিন আপনার শরীরে যেই পরিমাণে ভিটামিনের প্রয়োজন হয় যদি তার ঘাটতি হয়ে যায় তাহলেই সমস্যা হয়। সারাদিনের পরিশ্রমের তুলনায় যদি আপনার শরীরে ভিটামিন পর্যাপ্ত না হয়, তাহলে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধতে শুরু করে। যার ফলে শারীরিকভাবে আপনি বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন।
যদি আপনার অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এর সমস্যা থাকে তাহলে ভিটামিনের অভাবে আপনার পেশির দুর্বলতা সহ বিভিন্ন ধরনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এমনকি ভিটামিনের অভাবে মাথা ঘোরা দুশ্চিন্তায় ভোগা, সামান্য পরিশ্রমে হাঁপিয়ে উঠা এবং বুক দড়ফড়ের মত সমস্যা হতে পারে।
শরীরে ক্লান্তিভাব কি ভিটামিনের অভাবে হয়
হয়তো আপনি ভাবছেন ভিটামিনের অভাবে আপনার শরীর খুব বেশি ক্লান্তি অনুভব হচ্ছে। কিন্তু আপনি কি এটি জানেন যেকোন ভিটামিনের অভাবে আপনার শরীরে এইরকম সমস্যা হতে পারে? শরীরের একদম ভেতর থেকে লাল রক্ত তৈরির জন্য ভিটামিন দরকার হয়। সারাদিনের পরিশ্রমের পরে শরীর যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন যেই ধরনের ভিটামিনের অভাব হতে পারে তার একটি নমুনা চলুন দেখি।
- যদি কোন কারণে ভিটামিন বি এর অভাব দেখা দেয় তাহলে শরীরে দুর্বলতা, বিষন্নতা এর মত সমস্যা শুরু হয়ে যাবে।
- এছাড়াও ভিটামিন ই এর অভাব দেখা দিলে আপনার শরীরে চর্বি এবং হজম ঠিকভাবে হয় না।
- ভিটামিনের ঘাটতির কারণে যখন আপনার শরীর খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়বে তখন আপনার ক্ষুধাও কমে যাবে।
- যাদের ভিটামিন সি খাওয়ার অভ্যাস নেই তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে।
- সারাক্ষণ ক্লান্ত হয়ে থাকা এক ধরনের রোগ যা শুধুমাত্র এই ভিটামিনের অভাবেই প্রকাশ পেতে পারে।
- যেহেতু শরীরের লাল রক্ত কোষ তৈরি হতে পারে না, তাই পর্যাপ্ত ভিটামিন বি এই সময়ে খাওয়া প্রয়োজন।
- ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দিলে আপনার মনও ভালো থাকবে না।
- আপনার শরীরে এক ধরনের না চাইতেই ক্লান্তি ভাব চলে আসবে।
- নিরামিষ জাতীয় খাবারে ভিটামিন বি টুয়েলভ একটু বেশি পরিমাণে পেতে পারেন।
- শরীরের ক্লান্তি দূর করতে বেশি করে দুগ্ধজাত খাবার, ডিম, বিভিন্ন ধরনের লাল মাংস, সামুদ্রিক মাছ, মাশরুম, ডাল ও আরো অন্যান্য ধরনের ভিটামিন জাতীয় খাবার খেতে পারেন।
ভিটামিনের অভাবে কি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে
ভিটামিনের অভাবে একজন মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে। কারণ যখন শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি হয় তখন শরীরে স্বাভাবিক ভাবে চলাচল প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। তৈরি হয় নানা ধরনের জটিলতা যার ফলে শারীরিক ক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দেয়। দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, সেই জন্যে শরীরে ত্বকের কোষ দুর্বল হয়ে পড়ে।
মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিনের ঘাটতি হয়। ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সাথে খুব সহজে লড়াই করতে পারে না। বিভিন্ন অভাবজনিত সমস্যা বিশেষ করে ভিটামিন এ পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া হয় না বলে রাতকানা রোগের মত সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কোন ধরনের খাবার খাওয়া উত্তম
শুধু তাই নয় সঠিক মানসিক বিকাশের জন্যে পর্যাপ্ত ভিটামিনের ঘাটতি হলে বন্ধুত্ব এবং গর্ভধারণেও নানা জটিলতা হতে পারে। কোন ধরনের ক্ষত দেখা দিলে খুব তাড়াতাড়ি সেটি নিরাময় হতে চায় না। যেহেতু ভিটামিন এ আপনার শরীরের ত্বকের বিভিন্ন ধরনের কোষের কোলাজেন তৈরি করতে পারে, তাই এই ভিটামিনের অভাব হলে ক্ষত শুকাতে চায় না।
পেশির দুর্বলতা হতে পারে, ঠিকমতো আপনি হাত পা নাড়াচাড়া করতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। অকালে চুল পড়ে যাওয়াটাও ভিটামিনের অভাবে হতে পারে। কারণ শরীরে যদি আপনার পর্যাপ্ত পরিমাণে কপারের ঘাটতি হয় তাহলে বেশি করে মাশরুম, কাজুবাদাম এইগুলো খেতে পারেন।
অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কি ভিটামিনের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়
খুব বেশি ভিটামিনের অভাব হলে কোন খাবার প্রয়োজন তা যদি আপনার জানা না থাকে, তাহলে আপনার বিভিন্ন ধরনের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে এর ফলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভিটামিনের অভাবে আপনার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তার কিছু ধারনা চলুন দেখে নিই।
- ঠোঁট ফাটা হলে ভিটামিন সি এর অভাব থাকতে পারে।
- পায়ের গোড়ালি যদি দীর্ঘদিনের ফাটা থাকে তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে আপনার শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিনের ঘাটতি আছে।
- এছাড়াও আপনার দাঁতের মাড়ি থেকে যদি রক্ত বের হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয় তাহলে সেটিও ভিটামিনের ঘাটতিতে হতে পারে।
- তবে এই সমস্যার সমাধানের জন্য আপনি লেবু খেতে পারেন।
- চোখের নিচে কালি পড়ার মতো সমস্যা ভিটামিন এর অভাবে হতে পারে।
- অনেক সময় দেখা যায় আপনার চোখের আশেপাশের জায়গাটুকু ফোলে যায়, এই ধরনের সমস্যা ভিটামিন এ এর অভাবে হতে পারে।
ভিটামিনের অভাব বোঝার উপায় কি
শারীরিক বিভিন্ন গঠন ক্রিয়ার সমস্যার দিকে লক্ষ্য করলে আপনি বুঝতে পারবেন ভিটামিনের অভাব কি পরিমাণে আপনার শরীরে রয়েছে। আর এই ধরনের ভিটামিনের অভাব বুঝার জন্য অস্বাভাবিক কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। এর মধ্যে আপনার দেহের নানা অংশ অবশ হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।
যার ফলে ভিটামিনের অভাবে রক্তস্বল্পতা এবং দুর্বলতা হতে পারে এবং শারীরিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আপনার হাতে ও পায়ে ঝি ঝি ধরার মতো সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে এইরকম অনেকেরই পায়ের পাতার অংশে অথবা তালুতে ঝি ঝি ধরতে দেখা যায়।
এমনকি অতিরিক্ত পরিমাণে চুলও পড়ে যেতে পারে। অথবা চুল পেকেও যেতে পারে। যা মূলত কোন ধরনের কেমিক্যাল এর কারণে নাও হতে পারে। তবে ভিটামিন বি, বিটামিন ই, ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম জনিত সমস্যা থেকেও হতে পারে।
সামান্য কেটে যাওয়া বন্ধ না হলে কোন ভিটামিন খাবেন
সামান্য কেটে যাওয়া বন্ধ করার জন্য আপনি কোন ধরনের ভিটামিন খেতে পারবেন, তা যদি না জানেন তাহলে কেটে যাওয়া বন্ধ করা খুব বেশি কঠিন হতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শরীরে পর্যাপ্ত বাড়াতে হলে আপনাকে ভিটামিন কে গ্রহণ করার চেষ্টা করতে হবে। এই জাতীয় ভিটামিনের মধ্যে যেই ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে আসুন সেইগুলো জেনে নিই।
- ভিটামিন কে অন্য সকল ভিটামিনের মতই অনেক বেশি পরিমাণে পুষ্টি উপাদানে ভরপুর।
- আপনার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বন্ধ করার জন্যে এটি খুব কার্যকরী।
- কারণ বিভিন্ন ধরনের প্রোটিনের সমন্বয়ে তৈরি হয় বলে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
- এতে রয়েছে পর্যাপ্ত মেনাকুইনোন এবং ফাইলোকুইনোন যা আপনি ভিটামিন কে থেকে সরাসরি পেতে পারেন।
- সবুজ ধরনের যেকোন খাবারে আপনি ভিটামিন কে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাবেন।
- পুঁইশাক, পালংশাক, লেটুসপাতা, বাঁধাকপি, ব্রকোলি, শসা অথবা যেকোন ধরনের সবজিতে ভিটামিন কে খুব বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।
- পর্যাপ্ত পুষ্টি ও মিনারেল পাওয়া যায় বলে ভিটামিনে ভরপুর এই সকল খাবার খেতে পারেন।
- ভিটামিন কে যুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে আপনার সামান্য কাটায় অতিরিক্ত রক্তপাত খুব সহজে বন্ধ হবে।
চোখকে সুস্থ রাখতে কোন ভিটামিন প্রয়োজন
চোখের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে যা ভিটামিন এর ঘাটতি হলে দেখা দেয়। তবে এই সমস্যা যদি আপনার দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে ধীরে ধীরে তা জটিল আকার ধারণ করতে পারে। চোখে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মধ্যে প্রচলিত একটি সমস্যা রাতকানা যা খুব দ্রুত হয়ে যেতে পারে।
এছাড়াও চোখে শুষ্ক ভাব দেখা দিতে পারে। ভিটামিন এ যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে না পায়, তাহলে এই অবস্থায় একজন রোগীর অন্ধত্ব সারা জীবনের জন্যে হয়ে যেতে পারে। এমনকি কর্নিয়া হলে এই রোগে মারাও যেতে পারে। কারণ যদি চোখ সুস্থ হয়ে যায় তাহলে চোখে অশ্রু উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে যায়।
যার ফলে অবস্থা খুবই অবনতির দিকে যেতে থাকে। রাতে চোখে কম দেখার মত সমস্যা হতে পারে। যেহেতু দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে যায় সেই জন্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ জাতীয় খাবার আপনাকে নিয়মিত খেতে হবে।
শেষকথা
প্রিয় পাঠকগণ, খুব বেশি ভিটামিনের অভাব হলে কোন খাবার প্রয়োজন এই সম্পর্কে বিস্তারিত অনুচ্ছেদটি থেকে আশা করছি খুব ভালোভাবেই পড়েছেন। এখন থেকে নিশ্চয়ই শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিনের ঘাটতি যাতে না হয় সেই সম্পর্কে সচেতন হতে আপনাদের সহজ হবে। যদি আপনার নিয়মিত খাদ্য তালিকায় ভিটামিন যুক্ত খাবার গুলো নিয়মিত থাকে।
আরো পড়ুনঃ রাতে গরম লেবু পানি কেন খাবেন
তাহলে খুব শীঘ্রই আপনার পক্ষে ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভব। পোস্টের সকল ধরনের তথ্য পড়ে যদি উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার আশেপাশের সকলের মাঝে গুরুত্বপূর্ণ পোস্টটি শেয়ার করে দিতে পারেন। মূল্যবান মতামত জানাতে পোস্টের নিচে মন্তব্য করে আসতে পারেন। আরও অন্যান্য অজানা বিষয়ে জানতে ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url