স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখতে ফলমূল ও শাকসবজি কতটুকু খাওয়া ভালো
স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখতে ফলমূল ও শাকসবজি কতটুকু খাওয়া ভালো ধারণা না থাকলে সুস্থ থাকা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখতে ফলমূল ও শাকসবজি কতটুকু খাওয়া ভালো না জেনে অতিরিক্ত খেলে বিপদেও পড়তে পারেন। আজকের আলোচনার বিষয়ের মধ্যে স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখতে ফলমূল ও শাকসবজি কতটুকু খাওয়া ভালো এটি একটি।
পূর্ণবয়স্ক লোকের খাবারের তালিকা যেই রকম হবে অবশ্যই একজন শিশুর খাবারের তালিকা সেই রকম হবে না। তাই বয়স অনুযায়ী পরিমিত পরিমানে বুঝে ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে। সবুজ শাকসবজি এবং ফলমূল খুবই পুষ্টিকর। কিন্তু সব ধরনের খাবারের পরিমাণ বুঝে খেতে হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ফলমূল ও শাকসবজি শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টি দিতে পারে।
পেইজ সূচিপত্র
- ভূমিকা
- নিয়মিত শাকসবজি কতটুকু খাওয়া উচিত
- পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির জন্যে দৈনিক কি পরিমাণ ফল ও শাকসবজি খাওয়া উচিত
- ফল এবং শাকসবজি ওজন কতটুকু কমাতে পারে
- ফল এবং শাকসবজি খাওয়ার ফলে কোন ধরনের উপকার হয়
- প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় কেন ফল বেছে নিবেন
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ফল এবং শাকসবজি কেন দরকার
- পরিশেষে
ভূমিকা
নিয়মিত আপনার খাবারের তালিকার মধ্যে যদি ফলমূল এবং শাক সবজি রাখতে পারেন, তাহলে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, ফসফরাস, আয়রন এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ যেকোন ধরনের পুষ্টি পেতে পারেন। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ রয়েছে এইরকম ধরনের খাবার যদি বেছে নিতে পারেন, তাহলে একাধিক পরিমাণে শারীরিক উপকার পেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার এর তালিকা
প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া বিভিন্ন ধরনের ফলমূল এবং শাকসবজি নিয়মিত আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে। সেই সাথে যথেষ্ট পুষ্টির জোগান দিতে পারে। যত বেশি পরিমাণে শাকসবজি খেতে পারবেন, এতে করে খুব সহজেই আপনি নিজের শরীরের নিয়ন্ত্রণ খুব ভালোভাবে করতে পারবেন।
নিয়মিত শাকসবজি কতটুকু খাওয়া উচিত
দৈনন্দিন খাবারের চাহিদায় আপনি শাকসবজি কতটুকু খেতে পারেন তা মূলত আপনার উপর নির্ভর করবে। শাকসবজি যেই পরিমাণে খেলে আপনার শরীরে চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে সেই সম্পর্কে আপনার একটি সঠিক ধারণা থাকা প্রয়োজন।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে অনেকেরই ধারণা যে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম খেলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। কিন্তু ঠিক তা নয়। আপনি শাকসবজি থেকেও পুষ্টিকর প্রয়োজনীয় প্রোটিন পেতে পারেন। সেইগুলো কি হতে পারে চলুন জেনে নেয়া যাক।
- মাশরুমে অনেক বেশি পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়।
- খাদ্য তালিকায় যদি ব্রকোলি রাখতে পারেন, তাহলে দুই দশমিক আট গ্রাম এর মত পর্যাপ্ত প্রোটিন পেতে পারেন।
- এছাড়াও মটরশুঁটি, পালংশাক, ফুলকপি, ভূট্টা এই সকল সবজিতেও প্রোটিন পর্যাপ্ত পাওয়া যায়।
- অ্যাভোকাডো এর মত শাকসবজিতেও প্রায় আট গ্রামের মতো প্রোটিন পাবেন।
- এর সাথে ঢেঁড়স, কচু শাক, রঙ্গিন যেকোন ধরনের শাকসবজি পরিমাণ মতো খেতে পারেন।
- ভূট্টা, আলু, মূল জাতীয় যেকোন সবজি, সিমের বিচি, কাঁঠালের বিচি সহ আরো কিছু পুষ্টি জাতীয় শাকসবজি রাখতে পারেন।
পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির জন্যে দৈনিক কি পরিমাণ ফল ও শাকসবজি খাওয়া উচিত
একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিকে নিয়মিত যেই পরিমাণে ফলমূল এবং শাকসবজি খেতে হবে। তা যদি সে না খেয়ে থাকে তাহলে শরীরে পুষ্টিগুণ উপাদানের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। যার ফলে দেখা দিতে পারে নানা ধরনের রোগব্যাধি। প্রতিদিন পর্যাপ্ত ফলমূল এবং শাকসবজি আপনার ওজনকে খুব সহজেই ঠিক রাখতে পারে।
যদি আপনি নিজেকে সুস্থ রাখতে চান তাহলে নিয়মিত দৈনিকই আপনাকে প্রায় গড় অনুপাতে পুরুষ এবং নারীর জন্য যথাক্রমে সত্তর থেকে আশি এবং পঞ্চাশ থেকে ষাট গ্রামের মতো প্রোটিন জাতীয় খাদ্য খেতে হবে। প্রাণীজ প্রোটিন জাতীয় খাদ্য আপনি যদি আপনার খাদ্যের তালিকায় না রাখেন, তাহলে অ্যামিনো অ্যাসিডের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ সব সময় পেট ভরা কেন লাগে
তবে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে আমিষের জন্য প্রতি কেজি ওজনের জন্য এক গ্রাম করে খেতে হবে। পরিমিত পরিমাণে সুষম খাদ্য গ্রহণ করার জন্যে আপনাকে ক্যালসিয়াম চারশো পঞ্চাশ মিলিগ্রাম, আয়রন নয় মিলিগ্রাম, আয়োডিন একশো পঞ্চাশ মাইক্রোগ্রাম, ফসফরাস আটশো মিলিগ্রাম এবং পটাশিয়াম দুই দশমিক পাঁচ মিলিগ্রামের মত খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
আপনাকে পর্যাপ্ত আঁশ জাতীয় সবুজ সবজি খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যার মধ্যে পর্যাপ্ত প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম থেকে শুরু করে শর্করা সবকিছুই বিদ্যমান রয়েছে। অনেক বেশি পরিমাণে ফলমূল খেতে হবে যেইগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে।
যা আপনার শরীরের নিয়মিত চাহিদা পূরণে সাহায্যে করতে পারে। দৈনিক প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় পাঁচশো ক্যালোরির মতো সবজি এবং ফলমূলের খাবারের তালিকা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী হতে পারে।
ফল এবং শাকসবজি ওজনকে কতটুকু কমাতে পারে
ওজন কমানোর জন্য অনেকেই বিভিন্ন কিছু খেয়ে কমাতে চায়। তাই প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন যেই সকল ফল এবং শাকসবজি আমাদের আশেপাশে পাওয়া যায়, সেই সকল খাবার খেয়েও আপনি আপনার ওজনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন। আসুন ফল এবং শাকসবজি কিভাবে ওজনকে নিয়ন্ত্রণ করে তার একটি নমুনা দেখে আসি।
- যদি খুব তাড়াতাড়ি নিজের ওজন কমাতে চান তাহলে আপনাকে দৈনিক নিয়মিত বিশ থেকে পঞ্চাশ গ্রামের মতো শর্করা গ্রহণ করার চেষ্টা করতে হবে।
- এর সাথে পর্যাপ্ত বেরি জাতীয় ফল যার মধ্যে রয়েছে আম, জাম, বাদাম এবং ভিটামিন সি জাতীয় যেকোন ধরনের ফল খেতে পারেন।
- কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই পঞ্চাশ থেকে একশো গ্রামের বেশি খাবেন না।
- কিন্তু আপনি ফলমূল এবং শাকসবজি খাওয়ার ক্ষেত্রে মিষ্টি আলু, ওটস এবং ফাইবার অথবা আঁশ জাতীয় সবজি অথবা ফলমূল খেতে পারেন।
- লিচু, পেয়ারা, জামরুল, তরমুজ, জাম, কলা, তরমুজ, কমলা, আপেল অথবা যেকোন রকমের ফল আপনার ওজন কমাতে সাহায্যে করতে পারে।
- বিশেষ করে যেই ধরনের ফল এর মধ্যে পানীয় ভাব বেশি সেই সকল ফল আপনার অনেক বেশি উপকারে আসতে পারে।
ফল এবং শাকসবজি খাওয়ার ফলে কোন ধরনের উপকার হয়
নিয়মিত ফল এবং শাকসবজি খাওয়ার ফলে আপনার যেই ধরনের উপকার হতে পারে তা শুনলে আপনি চমকে উঠতে পারেন। যার মধ্যে একটি হল বয়সের বার্ধক্য কমে যাওয়া। যার ফলে আপনি নিজের মধ্যে খুব সহজেই চাঙ্গা রাখার মনোভাব তৈরি করতে পারবেন। আপনার শরীরের অতিরিক্ত বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দিয়ে আপনাকে সুস্থ রাখতে পারে।
আপনার চোখের দৃষ্টিশক্তির উন্নয়ন সাধন করতে পারে। নিয়মিত সবুজ শাকসবজি খাওয়ার ফলে আপনি যখন সারাদিন কোন কম্পিউটার বা ল্যাপটপে বসে কাজ করতে থাকেন, তখনও আপনার কোন ধরনের সমস্যা না হতে এটি সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখতে ফলমূল ও শাকসবজি কতটুকু খাওয়া ভালো যদি না জানা থাকে, তাহলে শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারবেন না। তাই ফলমূল ও শাকসবজি খেলে হাড় ও ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করার পাশাপাশি আপনার ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় কেন ফল বেছে নিবেন
নিয়মিত খাবারে তালিকা এর মধ্যে আপনি চাইলে সিজনাল ফলগুলো রাখতে পারেন। কারণ সিজনাল ফলগুলো প্রাকৃতিকভাবেই আপনাকে অনেক বেশি পরিমাণে পুষ্টি দিতে পারে। এমনকি মিষ্টি জাতীয় ফল আপনার শরীরে চিনি এর চাহিদাও পূরণ করতে পারে।
আপনি চাইলে বিভিন্ন ফলের জুস করেও খেতে পারেন। তবে নিয়মিত খাবারে কি ধরনের ফলগুলো আপনি খুব সহজেই বেছে নিতে পারবেন তার একটি তালিকা চলুন দেখি।
- পর্যাপ্ত তরমুজ খেতে পারেন এর ফলে আপনার শরীরে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যেতে পারে এবং খুব সহজেই ওজনও কমতে পারে।
- মালটাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায় এবং ফাইবার থাকায় এটি আপনার হজমে খুব সহায়তা করে।
- রক্তের শর্করার পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যেই ফল আপনাকে সাহায্য করতে পারে তার মধ্যে একটি হলো নারিকেল।
- দেহের বাড়তি মেদ কমানোর জন্য আপনি মালটা খেতে পারেন।
- কমলালেবু খাওয়ার ফলে আপনি ভিটামিন, ফাইবার এবং পানির পর্যাপ্ত চাহিদা পূরণ করতে পারবেন।
- যার ফলে আপনার শরীরের ওজন এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দুটিই নিরাময় করতে পারে।
- নাশপাতি খাওয়ার চেষ্টা করুন এটি আপনার শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে দেয়।
- প্রতিদিন অল্প করে একটি বা দুইটি ছোট কলা খেতে পারেন।
- কিউই ফল খেতে পারেন যার ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ই এবং ফাইবার পাবেন যা আপনার ব্লাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ফল এবং শাকসবজি কেন দরকার
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত খাবারের ফল এবং শাকসবজি খুবই প্রয়োজনীয়। কারণ নিয়মিত আপনার শরীরে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এর চাহিদা পূরণ এর প্রয়োজন হয়। পর্যাপ্ত ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, খনিজ এবং ফাইবার জাতীয় উপাদান দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
আরো পড়ুনঃ যে সাত কারণে চিনাবাদাম খেতে পারেন
এই সকল পুষ্টি উপাদানগুলো সব সময় আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কাজ করায়, ফলমূল এবং শাকসবজি নিয়মিত খেতে পারলে এই সকল চাহিদা খুব সহজেই পূরণ হয়। ভিটামিন সি যুক্ত চাহিদা পূরণের জন্য আপনি ফলমূল অনেক বেশি খেতে পারেন। এই জন্যে আমলকি, লেবু, কমলা, তেঁতুল, মালটা, জাম্বুরা এবং আরো অন্যান্য ফল খেতে পারেন।
শাকসবজি এর মধ্যে পালংশাক, পুঁইশাক, লালশাক, লাল ক্যাপসিকাম, করলা, ঢেঁরশ এবং আরো অন্যান্য অনেক ধরনের শাকসবজি খেতে পারেন। রঙিন শাকসবজি সেটি যেটিই হোক আপনার পুষ্টি চাহিদা পূরণে সব সময়ই সহায়তা করবে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিবে।
পরিশেষে
প্রিয় পাঠক, স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখতে ফলমূল ও শাকসবজি কতটুকু খাওয়া ভালো পোস্টটি পড়ে তা জানার পর আশা করছি স্বাস্থ্য সচেতনে উপকৃত হয়েছেন। এখন নিশ্চয়ই নিজেকে সচেতন করার মাধ্যমে সঠিক খাদ্য তালিকা তৈরি করে স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখার চেষ্টা করতে পারবেন।
এই অনুচ্ছেদের বিস্তারিত পড়ে স্বাস্থ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা দূর হয়ে থাকলে সকলকে সচেতন করতে আশেপাশের বন্ধুদের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন। মূল্যবান মতামত জানাতে পোস্ট এর নিচে মন্তব্য করে আসতে পারেন এবং আরো অন্যান্য অজানা আর্টিকেল পেতে ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url