অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা

অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লেখাটি পড়ুন। যাদুকরী অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য জানতে চলেছেন। অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি, সেগুলো এখানে তুলে ধরবো।

অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা

অনেকেই জানে না অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি। অথচ স্বাস্থ্য সচেতন হতে হলে এগুলো জানা দরকার। চলুন জেনে নেয়া যাক, অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি।

পেজ সূচি:

ভূমিকা:

আজকের এই লেখাটির মূল উদ্দেশ্য হলো, অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি সেই সম্পর্কে আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানানো। রুপচর্চা থেকে শুরু করে রান্নায় অলিভ অয়েল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাই অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা আমাদের জন্য জরুরি।

অলিভ অয়েল কি:

অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি, সেগুলো জানার আগে এটা সম্পর্কে একটু ধারনা নেয়া যাক। কারণ অলিভ অয়েল সম্পর্কে অনেকেই সঠিক তথ্য জানে না। অলিভ অয়েল মূলত জলপাই দিয়ে তৈরি এক ধরনের তেল। সেই প্রাচীন যুগে মিশরীয় সভ্যতায় অলিভ অয়েলের ব্যবহার ছিলো বলে জানা যায়।

জলপাইয়ের নির্যাস থেকে তৈরি করা হয় অলিভ অয়েল। উচ্চ মানের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন এ, ডি এবং ই সমৃদ্ধ অলিভ অয়েল আমাদের ত্বক ও চুলের যত্নে যাদুর মতো কাজ করে। তাছাড়া এই তেলে রয়েছে অবিশ্বাস্য সব পুষ্টিগুণ যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

আরো পড়ুন: ওয়ালমার্ট কোম্পানীর প্রতিষ্ঠাতা কে তিনি কিভাবে ওয়ালমার্টের মালিক হলেন

হ্যাঁ, উপকারিতার পাশাপাশি এই তেলের কিছু অপকারি দিক রয়েছে। তবে এর উপকারী দিকগুলোই বেশি। তাই আমাদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।

অলিভ অয়েল তেলের প্রকারভেদ:

  • এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল (১০০% খাঁটি)
  • ভার্জিন অলিভ অয়েল (একটু কম খাঁটি)
  • রিফাইন্ড অলিভ অয়েল (আরো কম খাঁটি)
  • পিওর অলিভ অয়েল (খাঁটি নয়, কোনো পুষ্টি উপাদান থাকে না)
  • লাইট এন্ড এক্সট্রা লাইট অলিভ অয়েল (সবচেয়ে নিম্ন মানের)

অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা:

অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে লিখতে যাচ্ছি। প্রথমে এর উপকারিতাগুলো তুলে ধরছি:

১. ত্বকের যত্নে:

  • অলিভ অয়েলের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের মৃত কোষগুলোকে সজীব ও প্রাণবন্ত করে তোলে।
  • প্রতিদিন রাতে অলিভ অয়েলের সিরাম মুখে লাগালে ব্রণের দাগ, রোদে পোড়া দাগ দূর হয় এবং ত্বক হয় উজ্জ্বল ও মসৃণ।
  • শীতের রাতে ত্বকে অলিভ অয়েল মাসাজ করে ঘুমালে এর অলিক এসিড ও ফ্যাটি এসিড উপাদান সারারাত ত্বকের উপরে কাজ করে, ত্বকে ফিরিয়ে আনে নতুন জেল্লা।
  • অলিভ অয়েলে থাকা ভিটামিন ই  চোখের চারপাশে ডার্ক সার্কেল নিমিষেই দূর করে।
  • অলিভ অয়েলের সিরাম বা নাইট ক্রিম নিয়মিত মুখে লাগালে এর অলিক এসিড ত্বকের ছোপ ছোপ দাগ, মেছতার দাগ, বয়সের ছাপ দূর করে ত্বককে করে কমণীয়, উজ্জ্বল ও টানটান।

২. চুলের যত্নে:

  • অলিভ অয়েলে থাকা ভিটামিন ই চুলের গোড়া শক্ত করে। নিয়মিত অলিভ অয়েল চুলের গোড়ায় মাসাজ করলে চুল সহজে পড়ে না।
  • নিয়মিত অলিভ অয়েল চুলে মাসাজ করলে এতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট চুলের বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।
  • যাদের অল্প বয়সে চুল সাদা হয়ে যাচ্ছে, তারা অলিভ অয়েলের সাথে খাঁটি নারিকেল তেল, ই ক্যাপসুল, ডিমের কুসুম মিলিয়ে একটি হেয়ার প্যাক তৈরি করে নিতে পারেন। সপ্তাহে দুই দিন চুলে লাগালে চুল পাকা রোধ হবে।
  • চুলে খুশকি হয় মূলত মাথার চামড়া শুকানোর ফলে। নিয়মিত স্কাল্পে অলিভ অয়েল হালকা গরম করে মাখালে চুলের গোড়ার কোষগুলো সজীব থাকে। ফলে খুশকি কমে যেতে শুরু করে।
  • নিয়মিত মাথার স্কাল্পে অলিভ অয়েল মাসাজ করলে এতে থাকা ভিটামিন ই এবং পলিফিনল চুলে পুষ্টি যোগায়। এতে চুল হয় ঘন ও মসৃণ। তাছাড়া এভাবে মাসাজ করলে মাথার স্কাল্পে রক্ত চলাচল ভালো হয়।

৩. স্বাস্থ্যের উপকারিতা:

  • অলিভ অয়েলে থাকা ফ্যাটি এসিড মূলত একটি মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট। এটি মোট তেলের ৭৩%। এই ফ্যাট ক্যান্সারের সাথে সংযুক্ত দেহের ক্ষতিকর কোষগুলোকে ধ্বংস করে।
  • এই তেলে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ই এবং কে। এই উপাদানগুলো হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
  • নিয়মিত অলিভ অয়েল খেলে বিপাকীয় সিনড্রোম, টাইপ 2 ডায়াবেটিস, আলঝেইমার রোগের ক্ষেত্রে প্রদাহ রোধ করা সম্ভব।
  • রান্নায় অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।
  • এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল সবজিতে কিংবা মাখন বা বাদামের সাথে মিশিয়ে খেলে হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিস ও স্থুলতার ঝুঁকি কমে।

অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এখানে আলোচনা হচ্ছে। এতক্ষণ এর উপকারিতাগুলো জানলেন। এবার এর অপকারিতা সম্পর্কে একটু জানা যাক।

সত্যি বলতে, অলিভ অয়েলের অপকারের চেয়ে উপকারের পরিমাণ বহুগুণ বেশি। তবুও একটু সতর্ক থাকা উচিৎ। যারা ডায়াবেটিসের রোগী, তাদের প্রতিদিন দুই চা-চামচের বেশি অলিভ অয়েল না খাওয়াই ভালো। আর খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরার ক্ষেত্রে এর অপকারীতাগুলো অবহেলা করা যায় না। যাদের স্কিনে র‍্যাশ, এলার্জি জাতীয় সমস্যা রয়েছে, তারা অলিভ অয়েল দিয়ে রুপচর্চা করার ক্ষেত্রে একটু সাবধান হবেন। সর্বোপরি অপকারের চেয়ে এর উপকারী দিকই বেশি।

আসল অলিভ অয়েল কিভাবে চিনবেন:

অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার পাশাপাশি, সেটি আসল নাকি নকল এটা জানাও গুরুত্বপূর্ণ। নকল অলিভ অয়েল উপকারের পরিবর্তে শরীরের অনেক ক্ষতি করে ফেলে। আসল অলিভ অয়েল চিনতে দুটো টেকনিক ফলো করতে পারেন:

'ফ্রিজ টেস্ট' করতে পারেন। একটি পাত্রে খানিকটা অলিভ অয়েল নিয়ে টানা দুই ঘন্টা ফ্রিজে রেখে দিন। দুই ঘন্টা পর যদি দেখেন পাত্রে তেল পুরোপুরি জমাট বেঁধে গেছে কিংবা পুরোপুরি তরল আছে, তবে এটা নকল তেল। আসল তেল হলে হালকা জমাট বাঁধবে এবং একটু ঘনঘন থাকে।

আরো পড়ুন: ত্বকের সৌন্দর্যে জাফরানের ভূমিকা কি

আরেকটি টেকনিক হলো- একটি পাত্রে অল্প তেল নিয়ে আগুন ধরিয়ে দিন। যদি ধোয়া ছাড়াই তেলটি গরম হতে শুরু করে, তবে এটা খাঁটি অলিভ অয়েল। অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার পাশাপাশি এই বিষয়গুলো জানাও অনেক জরুরি।

শেষ কথা:

অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরলাম। আশা করি উপকৃত হবেন। অসাধারণ যাদুকরী এই প্রাকৃতিক উপাদানটির উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো জানা থাকলে, আপনি সঠিকভাবে এই তেল রুপচর্চা ও রান্নায় ব্যবহার করতে পারবেন। (25957)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url