হলুদ খাওয়ার নিয়ম
হলুদ শরীরের অনেক প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং মানসিক চাপ কমানোর একটি প্রাকৃতিক উপায়। তাই এর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। আপনি এটি প্রায় যেকোনো জায়গায় খুঁজে পেতে পারেন। কিন্তু চিন্তা করছেন কিভাবে খাবেন বা হলুদ খাওয়ার নিয়ম কি? কোনো চিন্তা নেই নিচে হলুদ খাওয়ার নিয়ম বিস্তারিত জেনে নিন।
সূচিপত্রঃ হলুদ খাওয়ার নিয়ম
- আপনার খাদ্যতালিকায় হলুদ যোগ করার গুরুত্ব
- হলুদ খাওয়ার নিয়ম
- হলুদ মশলা হিসাবে আপনার প্রতিদিনের সবজি এবং তরকারিতে দিন
- দুধে হলুদ মিশিয়ে খেতে পারেন
- হলুদ দিয়ে চা তৈরি করতে পারেন
- হলুদের বা কারকিউমিন সাপ্লিমেন্ট বা ক্যাপসুল
- হলুদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি?
- শেষ কথা
আপনার খাদ্যতালিকায় হলুদ যোগ করার গুরুত্ব
হলুদ হল হলুদ গাছের মূল থেকে তৈরি একটি হলুদ মশলা। এটি প্রায় বাংলাদেশ, এশিয়ান, ভারতীয় এবং ফার্সি খাবারে ব্যবহৃত হয়। এটি বাংলাদেশ, চীন এবং ভারতে ভেষজ ওষুধ হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। হলুদের প্রধান সক্রিয় উপাদান হল কার্কিউমিনয়েড যৌগ। এই যৌগগুলির ফলেই এর রং হলুদ হয়। কারকিউমিন হল সেই যৌগ যাতে প্রচুর উপকার রয়েছে। হলুদ থেকে যে উপকারিতা গুলো পাবেন তা নিচে দেখুনঃ
- ফোলাভাব কমানো
- ক্যান্সারের কোষ মেরে ফেলে
- মানসিক চাপ কমায়
- ব্যথার চিকিৎসা
- স্মৃতিশক্তি বাড়ায়
- হৃৎপিণ্ড বা হার্ট ভালো রাখে
তবে মনে রাখবেনঃ হলুদ নিয়ে বেশিরভাগ গবেষণা করা হয়েছে পশুদের উপর, মানুষের উপর নয়। এর মানে হল মানুষের উপর হলুদের তেমন ক্লিনিকাল গবেষণা করার তথ্য নেই। তবুও, আপনি যদি আপনার রুটিনে হলুদ যোগ করতে চান তাহলে কিছু জিনিস আপনার জানা উচিত। যেমন, হলুদ খাওয়ার নিয়ম, কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম ও হলুদ কিভাবে ব্যবহার করবেন সবকিছু।
হলুদ খাওয়ার নিয়ম
আপনি যতই রান্নার জন্য হলুদের গুঁড়া বা তাজা হলুদ ব্যবহার করুন না কেন, এর থেকে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়না। তাই হলুদ থেকে বেশি উপকার পেতে এটা খাওয়ার আরো দিক খুঁজে বের করতে হবে। যাইহোক আপনার খাবারে রঙ এবং গন্ধ যোগ করার জন্য এটি একটি খুব ভালো উপায়। হলুদ ছাড়াতো তরকারিতে কোনো রং আসেনা।
আরো পড়ুনঃ আখের চিনির দাম কত টাকা
তবে তরকারিতে এক চিমটি হলুদ থেকে প্রায় এক টেবিল চামচ পর্যন্ত সামান্য পরিমাণে গুঁড়ো হলুদের প্রয়োজন হয়। তাই এখান থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি পাওয়া যায়না। যাইহোক, যেহেতু তাজা হলুদ শুকনো হলুদের চেয়ে কম শক্তিশালী, তাই আপনি যদি শুকনো হলুদের পরিবর্তে কাঁচা হলুদ খেতে চান তাহলে আপনাকে মোটামুটি চারগুণ বেশি তাজা হলুদ ব্যবহার করতে হবে। নিচে হলুদ খাওয়ার নিয়ম বিস্তারিত দেখুন।
হলুদ মশলা হিসাবে আপনার প্রতিদিনের সবজি এবং তরকারিতে দিন
আমরা প্রতিদিন যে তরকারি রান্না করি তাতে মশলা হিসাবে এবং তার মাধ্যমেই বেশিরভাগ মানুষ হলুদ খেয়ে থাকে। হলুদ ছাড়া তরকারি রান্না অসম্পূর্ণ থাকে। যেহেতু ভাল এবং পুরনো হলুদে কারকিউমিন থাকার কারণে প্রদাহ ভালো করে, অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তাই এটিকে আপনার ডাল বা তরকারিতে যোগ করুন, হলুদ এবং মরিচের সাথে মিশিয়ে। আপনি আপনার ডিম রান্না এবং পুলাওকে সুস্বাদু করতে এক চিমটি বা এক টেবিল-চামচ হলুদ যোগ করতে পারেন।
দুধে হলুদ মিশিয়ে খেতে পারেন
হলুদ খাওয়ার নিয়ম এর একটি ভালো উপায় হল দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে খাওয়া। দুধে হলুদ মিশিয়ে খেলে ক্ষত নিরাময় ও শরীরের ব্যথা উপশম হয়। এটি বেশিরভাগই রাতে ঘুমানোর আগে খাওয়া উচিত। এটা খেতে দুই ফোঁটা ঘি বা নারকেল তেলের মধ্যে আধা চা চামচ হলুদের পেস্ট গরম করুন তারপর এতে দুধ যোগ করুন। যদিও আপনি দুধের সাথে কালো গোল মরিচের গুঁড়া যোগ করলে হলুদের উপকারিতা আরো বাড়বে।
আরো পড়ুনঃ আপেল খালি পেটে খেলে কি হয়
মিষ্টি করার জন্য আপনি দারুচিনির গুঁড়া এবং মধুও মিশাতে পারেন। আপনি যদি বাদাম এবং বীজ জাতীয় খাবার পছন্দ করেন তবে দুধে এক মুঠো মিশালে এর স্বাদ আরো বাড়বে। খাবারে হলুদের গুঁড়া যোগ করে খেতে পারেন এটি প্রায় তরকারি, স্যুপ এবং ভাজা মাংসের মতো খাবারে ব্যবহৃত হয়। হলুদ খাওয়ার সবচেয়ে ভালো ও পুরোনো উপায়গুলির মধ্যে একটি হল উষ্ণ গরম দুধের সাথে মিশিয়ে আর এটা সবথেকে ভালো হলুদ খাওয়ার নিয়ম। হলুদ গুঁড়োতে আসলে খুব কম কারকিউমিন রয়েছে। তাই যত পারেন বেশি বেশি হলুদ খাওয়ার অভ্যাস করুন।
হলুদ দিয়ে চা তৈরি করতে পারেন
হলুদ চা হল আরেকটি সহজ রেসিপি যা আপনার খাবারে হলুদ যোগ করতে পারেন। একটি প্যানে কিছু পানি ফুটিয়ে এক কাপ হলুদ দিয়ে চা তৈরি করতে পারেন এবং তাতে ¼ চা চামচ হলুদের গুঁড়া বা তাজা কাঁচা হলুদ দিয়ে নাড়ুন। এটিকে কিছু সময়ের জন্য ফুটিয়ে এবং তারপরে এটিতে আরো একটু স্বাদের জন্য তাজা লেবুর রস এবং মধু মিশাতে পারেন।
হলুদের বা কারকিউমিন সাপ্লিমেন্ট বা ক্যাপসুল
হলুদ এবং কারকিউমিন সাপ্লিমেন্ট যে কোনো ঔষধ কাউন্টারে পাওয়া যায়। এই ক্যাপসুলগুলি বিশেষভাবে তৈরি করা হয় যাতে শরীরকে এই ক্যাপসুল গুলো শোষণ করতে সাহায্য করে। যারা হলুদের উপকারিতা অনেক বেশি পেতে চায় তারা এই ক্যাপসুল বেশি খায়। এই ক্যাপসুল গুলির বেশিরভাগই হলুদের রস দ্বারা তৈরি। ক্যাপসুলটিতে হলুদের গুঁড়ার চেয়ে অনেক বেশি কারকিউমিন রয়েছে। ক্যাপসুলগুলিতে ফ্যাট যৌগও থাকতে পারে। ক্যাপসুল গুলোতে এমন শক্তি রয়েছে যা শরীরের জন্য হলুদকে খুব ছোট ছোট টুকরো করে শোষণ করা সহজ করে তোলে।
আরো পড়ুনঃ পেট ব্যথা গ্যাস্টিকের কারণে নাকি হার্ট অ্যাটাকের কারণ
শুধু মসলা হিসাবে খেলে হলুদে প্রায় 3% কারকিউমিন থাকে, যা আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়। যদিও দীর্ঘমেয়াদে হলুদ এবং কারকিউমিনের বেশি ডোজ নেওয়া উচিত নয়। তাই কারকিউমিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পাওয়ার জন্য আপনারা ক্যাপসুল খেতে পারেন কিন্ত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তবে হলুদ খেতে হলে এবং সব উপকারিতা পেতে হলুদ খাওয়ার নিয়ম খুব ভালোভাবে জানতে হবে।
হলুদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি?
হলুদ সাধারণত বেশিরভাগ মানুষেরই সহ্য হয় অনেকেরই এর থেকে কোনো ক্ষতি হয়না। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের যাদের হলুদে অ্যালার্জি আছে তাদের এটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। আর তার ফলে যে সমস্যা গুলো হতে পারে তা হলঃ
- ডায়রিয়া
- মাথাব্যথা
- বমি বমি ভাব
- ফুসকুড়ি
- হলুদ মল
এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি হয় কারকিউমিনের বেশি মাত্রায় (প্রতিদিন 500 মিলিগ্রাম বা তার বেশি) ব্যবহার করলে। যদি হলুদ খাওয়ার পর আপনার এই সমস্যা গুলো দেখা দেয় তাহলে হলুদের বদলে হলুদের সাপ্লিমেন্ট বা ক্যাপসুল খেতে পারেন। তবে এগুলাও একসাথে বেশি না খেয়ে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে খেতে পারেন এতে আপনার সমস্যা না হওয়ার কথা।
হলুদ খাওয়ার নিয়ম - শেষ কথা
হলুদ এ কারকিউমিন নামক উপাদানের জন্য প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সুবিধা রয়েছে। কাঁচা হলুদ এবং গুঁড়ো হলুদ সহ হলুদ বিভিন্ন ভাবে পাওয়া যায় তবে গুঁড়ো হলুদে বেশি উপকারিতা রয়েছে। এটি খেতে তিক্ত স্বাদের মশলা এবং যা খাবারে সুন্দর রঙ যোগ করতে পারে। তরকারি, স্যুপ এবং স্ক্র্যাম্বল করা ডিম থেকে শুরু করে স্মুদি, চা এবং দুধে হলুদ খাওয়ার অনেক উপায় রয়েছে। আশা করি উপরের আলোচনা থেকে হলুদ খাওয়ার নিয়ম জানতে পারবেন। ২২৪৯৮
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url