আমলকির পুষ্টিগুণ বেশি পেতে হলে কিভাবে খেতে হবে

আপনি কি জানেন আমলকির পুষ্টিগুণ বেশি পেতে হলে কিভাবে খেতে হবে। আমলকির পুষ্টিগুণ বেশি পেতে হলে কিভাবে খেতে হবে তা খাওয়ার পূর্বে চাইলে গুনাগুন এবং নিয়মগুলো নিচে দেখে নিতে পারেন। আমলকির পুষ্টিগুণ বেশি পেতে হলে কিভাবে খেতে হবে গুরুত্বপূর্ণ এই টিপস দিতে আমাদের আজকের এই আর্টিকেল।
আমলকির পুষ্টিগুণ বেশি পেতে হলে কিভাবে খেতে হবে
নিয়মিত দুই থেকে একটি করে আমলকি খাওয়ার ফলে যেই পরিমাণে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি পাওয়া যায় তা আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে পারে। আমলকি আপনার শরীরের রক্তকে খুব ভালোভাবে পরিষ্কার রাখে এবং চামড়ার লাবণ্যতা বৃদ্ধি করে এবং পাশাপাশি আপনার যৌনশক্তিও বাড়িয়ে দেয়।

পেইজ সূচিপত্র

ভূমিকা

আমলকি এমনই একটি ছোট ফল যা খাওয়ার পর আপনি একটু কষ ও তেতো ভাব অনুভব করতে পারেন। কিন্তু কিছু সময় পরই দেখতে পাবেন মিষ্টি স্বাদ অনুভব হচ্ছে। যত ধরনের ভিটামিন সি জাতীয় ফল রয়েছে তার মধ্যে আমলকি এর মধ্যে ভিটামিন সি এর পরিমাণ সবচাইতে বেশি।


আপনার শরীরের বিভিন্ন রোগবালাই এর সমস্যা সমাধানে আমলকি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেকেই আমলকি ছেঁচে চুলের গোড়ায় দিয়ে চুল পড়া বন্ধ করতে চায়। এটি খুবই কার্যকরী বিশেষ করে চুলের রুক্ষতা অনেক কমে যায়। পাশাপাশি ত্বকে উজ্জ্বল আভা নিয়ে আসে।

আমলকি কিভাবে খেতে হয়

ভেষজ গুণাগুনে ভরপুর আমলকি আপনার জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। শুধু তাই নয় আয়ুর্বেদিক বিভিন্ন ধরনের ঔষধ তৈরিতেও আমলকির নির্যাস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় আমলকি খেলে আপনার পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়। এই বিষয়ে চলুন গুরুত্বপূর্ণ টিপস জেনে আসা যাক।

  • ছোট এই ফলটি অর্থাৎ আমলকি ভালভাবে চিবিয়ে খেতে পারেন।
  • মুখে দেওয়ার সাথে সাথেই বুঝতে পারবেন প্রথম দিকে এটি একটু তেঁতো লাগছে পরবর্তীতে মিষ্টি লাগছে।
  • তবে আপনি জুস বা অন্য কোনভাবেও এটিকে খেতে পারেন।
  • প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক থেকে দুইটি আমলকি খেলে আপনার খুব উপকারে আসবে।
  • এতে পর্যাপ্ত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি থাকায় একাধিক রোগ থেকে আপনাকে নিরাপদে রাখতে পারে।
  • কাঁচা আমলকির রস করেও নিয়মিত খেতে পারেন।
  • নিয়মিত যখন আপনি কাঁচা আমলকি খাবেন তখন রক্ত খুব ভালোভাবে পরিষ্কার হতে এটি সাহায্যে করবে।

আমলকি খাওয়ার সঠিক সময়

আমলকি খাওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় রাখতে পারেন। যেই সময়ে আপনি দুই থেকে একটির মত আমলকি খেতে পারেন। তবে এইক্ষেত্রে আপনি যদি সকালে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে দুই থেকে একটির মত আমলকি খেতে পারেন, তাহলে তা আপনার শরীরের জন্য অত্যন্ত ভালো কাজ করতে পারে।

শুধু তাই নয় আপনি যখন আমলকি খাবেন তখন এটি আপনার লিভার ভালো রাখতেও সাহায্য করে। ব্লাড প্রেসারের মাত্রাকেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার কারণে আমলকি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। চুলের পুষ্টি জোগায় এবং আপনার বয়স বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।


কারণ এতে সেলুলার ড্যামেজ রোধ করার ক্ষমতা থাকে। চাইলে জুস বা যেকোন রকম ভাবেও এই আমলকি খেতে পারেন। শীতের সময় আমলকির ফলন একটু বেশি হয়ে বলে আপনি বেশি করে এই ফল খাওয়ার সুযোগ পাবেন। প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে এক থেকে দুইটি আমলকি খাবেন।

যার মাধ্যমে আপনি সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন। তবে আপনাকে প্রতিদিন আমলকি খাওয়ার সঠিক নিয়ম মেনে নিয়মিত দুই থেকে তিনটিরও বেশি আমলকি না খাওয়াই ভালো। কারণ যেহেতু এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে তাই বেশি খেলে হিতে বিপরীতও হতে পারে।

খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

অন্য যেকোন ফল থেকে আমলকির গুনাগুন একটু বেশি কিন্তু আমলকির পুষ্টিগুণ বেশি পেতে হলে কিভাবে খেতে হবে? যেহেতু এটি যেকোন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে। যদি আপনি আমলকি ফলটি পেয়ারা অথবা লেবুর পরিবর্তে খেতে চান, তাহলে সেইক্ষেত্রেও আপনাকে এটি ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করতে সাহায্য করতে পারে।

কমলা অথবা আপেলের থেকেও আমলকিতে গুনাগুনের পরিমাণ অনেক বেশি। পাশাপাশি আম, কলাতে যেই পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে সেইগুলো থেকেও অনেক বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা গুলো নিয়ে চলুন বিস্তারিত জেনে আসি।

  • খালি পেটে আমলকি খাওয়ার ফলে আপনার চিরযৌবন ধরে রাখতে এটি খুবই সাহায্য করে।
  • যেই পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এতে রয়েছে তা আপনার বয়সকে কমিয়ে দিতে পারে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধান আমলকির রসে রয়েছে যা আপনার পাইলসের সমস্যাকেও দূর করতে পারে।
  • যদি আপনার বদহজম অথবা পেটের কোন ধরনের সমস্যা হয় সেটি আমলকি খেয়ে কমাতে পারেন।
  • আপনার শরীরে যদি পর্যাপ্ত ফ্যাট থাকে তাহলে সেই ফ্যাট কমানোর জন্য আমলকি অত্যাবশ্যক।
  • খালি পেটে প্রতিদিন সকালে আমলকির রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে ত্বকের কালো দাগ দূর হয় এবং উজ্জ্বলতা বাড়ে।
  • আমলকির নির্যাস রস থেকে যেই পরিমাণে পুষ্টি থাকে তা আপনার দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর কাজে খুবই সাহায্য করে।
  • ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে যথেষ্ট পরিমাণে সাহায্য করে।
  • যদি কোন ধরনের অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকে তাহলে দুধের সাথে আমলকির গুড়া এবং সাথে অল্প কিছু চিনি মিক্স করে প্রতিদিন নিয়মিত খেতে পারেন।

নিয়মিত কতটুকু আমলকি খেতে পারবেন

প্রতিদিন নিয়ম করে আপনি কি পরিমান আমলকি খেতে পারবেন তা আপনাকে জানতে হবে। কারণ প্রতিদিন যদি আপনি এক থেকে দুইটির বেশি আমলকি খেতে পারেন তাহলে তা আপনার রক্ত পরিষ্কার করতে অনেক বেশি সাহায্য করবে। এমনকি আমলকি নিয়মিত খেলে আপনার যৌন শক্তিও অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে। 

আমলকির রস অনেক বেশি পরিমাণে টক হওয়ার কারণে যদিও অনেকে খেতে পারে না। কিন্তু তারপরেও যদি আপনি এটিকে টক মনে করে খেতে না পারেন তাহলে কেটে টুকরো করে নিতে পারেন। আমলকি ফুটিয়ে খেলেও আপনি উপকার পাবেন। প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে যদি আপনি এক থেকে দুইটি খেতে পারেন।

তাহলে খুব ভালো উপকার পাবেন তবে যদি অতিরিক্ত পরিমাণে খেয়ে ফেলেন তাহলে সেই ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রয়োজনে আপনি আমলকির রস জুস করে নিয়ে তারপর অন্য যেকোন রসের সাথে অর্থাৎ ফলের রসের সাথে মিক্স করে খেতে পারেন। পরিমিত পরিমাণে আমলকির রস খাবেন যেন সমস্যা দেখা না দেয়।

শুকনো আমলকি কিভাবে খাবেন

শুধু কাঁচা আমলকি নয় শুকনো করেও আমলকি খাওয়া যায়। তবে এর জন্য সঠিক কিছু পদ্ধতি রয়েছে যেই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনি শুকনো আমলকি খেতে পারেন। তবে সেই সকল প্রক্রিয়া সম্পর্কে চলুন জেনে আসা যাক।

  • শুকনো আমলকি খাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে কিছু কাঁচা আমলকি সংগ্রহ করতে হবে।
  • সংরক্ষিত কাঁচা আমলকি গুলো আপনাকে রোদে শুকাতে হবে।
  • শুকিয়ে আসার পর আমলকি গুলোকে আপনি গুঁড়ো করে নিতে পারেন।
  • সেই আমলকির গুঁড়ো দিয়ে আপনি বিভিন্ন ধরনের আমলকির মোরব্বা তৈরি করে খেতে পারবেন।
  • অনেকে আবার শুকনো আমলকি দিয়ে আচার তৈরি করে থাকে যা খেতে খুবই সুস্বাদু হয়।
  • খালি পেটে বিভিন্ন ফলের রসের সঙ্গে আপনি আমলকির গুঁড়ো মিশিয়ে অথবা আমলকির রস মিক্স করে খেতে পারেন।
  • শুকিয়ে যাওয়া আমলকি আপনি সামান্য লবণ দিয়েও খেতে পারবেন।

আমলকির ক্ষতিকর দিক

যদি আমলকি আপনার খুব পছন্দের ফল হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে এটিও জানা রাখতে হবে যে, অতিরিক্ত পরিমাণে আমলকি খাওয়াও কিন্তু আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আমলকিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকে, তাই অতিরিক্ত পরিমাণে আমলকি খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।

মনে করুন আপনি নিয়মিত দুই থেকে তিনটিরও বেশি আমলকি খেয়ে থাকেন। কিন্তু এর থেকেও বেশি যখন আপনি খেয়ে ফেলবেন তখন সেটি আপনার শরীরে অনেক ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে যদি আপনার সার্জারি হয় অথবা অনেকে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে থাকে।

তাদের ক্ষেত্রে আমলকি খুব বেশি না খাওয়াই ভালো যেহেতু এতে প্রচুর ভিটামিন সি বিদ্যমান। কার্ডিয়াক সমস্যা জনিত কোন ধরনের সমস্যা থাকলে আমলকি খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিবেন। অধিকাংশ লোকেদের আমলকি যদি অত্যাধিক পরিমাণে খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে এলার্জি বৃদ্ধি পেতে পারে।

পরিশেষে

প্রিয় পাঠকগণ, আমাদের নিয়মিত পোস্টের মধ্যে আজকের যেই পোস্টটি পাঠ করছেন তা থেকে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন যে আমলকির পুষ্টিগুণ বেশি পেতে হলে কিভাবে খেতে হবে, আমলকি খাওয়ার সঠিক নিয়ম এবং আরো কিছু মূল্যবান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে। এখন থেকে আমলকি স্বাস্থ্যের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝে খাওয়ার চেষ্টা করবেন।


যদি আপনার কাছে আমলকি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে ভালো লাগে তাহলে আশেপাশের সকল বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। যদি আপনার কোন মূল্যবান মতামত থাকে তাহলে আমাদের পোস্টের নিচের অংশে মন্তব্য করতে পারেন। শুধু এই সকল পোস্টই নয় আরোও অনেক ধরনের গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য বিষয়ক টিপস পেতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে ভিজিট করে আসতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url